সাতকানিয়ায় ইয়াবাকাণ্ডে তিন পুলিশ সদস্য কারাগারে
জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে না জানিয়ে নিজেরাই অভিযান চালিয়ে ইয়াবা কারবারিকে গ্রেপ্তার, ইয়াবা জব্দ ও বিক্রির নগদ টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। আটক ইয়াবা কারবারীর বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে ছেড়ে দিয়ে বিনিময়ে আরও নগদ টাকা হাতিয়ে নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি।
জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার তদন্তে ঘটনার সত্যতা প্রমাণ হওয়ায় তিন পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করলে বিজ্ঞ আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এমন ঘটনা ঘটে। পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। গত ৮ আগস্ট এ সংক্রান্তে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য ও ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও বিষয়টি গত ৯ আগস্ট রাতে জানাজানি হয়।
কনস্টেবল শাহ মোহাম্মদ হাসান, আরাফাত নাজিম উদ্দীন ও বিমল চাকমা। তারা তিনজনই সাতকানিয়া উপজেলার ঢেমশা তদন্তকেন্দ্রের কর্মরত ছিলেন। তাদের গ্রেপ্তারের সময় কনস্টেবল শাহ মোহাম্মদ হাসানের দেখানো মতে ঢেমশা তদন্তকেন্দ্রের ব্যারাকের ট্রাংক থেকে মোট ৪৬৫ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। একইসঙ্গে পুলিশের লোগোযুক্ত এক জোড়া হ্যান্ডকাফ, নগদ ৫০ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল সেট জব্দ করা হয়। একই ভবনে কনস্টেবল আরাফাত নাজিম উদ্দীন থেকে দুটি ফাঁকা চেক, নগদ ৩১ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল সেট জব্দ করা হয়। একই সময়ে কনস্টেবল বিমল চাকমার প্যান্টের পকেট থেকে নগর নয় হাজার টাকা জব্দ করা হলেও বিষয়টি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি সাতকানিয়ার পুলিশ কর্মকর্তারা।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৬ আগস্ট ঢেমশাস্থ নাপিতের চর এলাকায় ওই তিন পুলিশ সদস্য সোর্স সোলায়মানকে সঙ্গে নিয়ে মাদক ব্যবসায়ী বেলালকে ৩০ থেকে ৪০ পিস ইয়াবা ও নগদ এক লাখ টাকাসহ আটক করে তাদের হেফাজতে নেন। তারা সোর্স সোলায়মানের বুদ্ধিতে রমজান আলী নামের এক মাদক ব্যবসায়ী থেকে ২০০ পিস ইয়াবা কেনার কথা বলে তাকে ওই বাসাতে আসতে বলেন। যদিও সেখানে রমজানের ছেলে আরাফাত ২০০ পিস ইয়াবা নিয়ে এলে তাকেও আটক করেন তিন কনস্টেবল। এরপর আটক কিশোর আরাফাতকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা নেন তিন পুলিশ কনস্টেবল। এ সময় বেলালের বাসা থেকে জব্দ করা এক লাখ টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা বেলালকে আর ২০ হাজার টাকা সোর্স সোলায়মানকে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে তাদের দুইজনকেও ছেড়ে দেন। বাকি এক লাখ ১০ হাজার টাকার মধ্যে কনস্টেবল হাসান ৫০ হাজার, নাজিম ৩০ হাজার ও বিমল চাকমা ৩০ হাজার টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন।
বিষয়টি টের পেয়ে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নির্দেশে ঢেমশা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই জাহাঙ্গীর আলম তদন্তে নেমে এর সত্যতা পান। এমনকি অভিযুক্ত তিন কনস্টেবল মাদকের টাকা আত্মসাৎ ও মাদক ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঘটনা অস্বীকার না করলেও মন্তব্য করতে রাজি হননি সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন। তবে জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এ ঘটনায় সাতকানিয়া থানার ঢেমশা তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে তিন পুলিশ কনস্টেবল ও পাঁচ মাদক ব্যবসায়ীসহ মোট আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এদের মধ্যে পুলিশ সোর্স সোলায়মান, ছেড়ে দেওয়া বেলাল ও আরাফাতও রয়েছেন। মামলার পরপরই অভিযুক্ত তিন পুলিশ কনস্টেবল হাসান, নাজিম ও বিমলকে গ্রেপ্তার করা হলেও অন্য আসামিরা এখনও পলাতক।
এই বিষয়ে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু সাংবাদিকদের বলেন, ‘কী শুনেছেন এটি নিয়ে আমি কিছু বলব না। পুরো বিষয়টা তদন্ত করে প্রয়োজনে আপনাদের জানানো হবে।’