অনাগত সন্তানের মুখ দেখা হলো না এএসআই সিদ্দিকের
প্রথম সন্তান স্ত্রীর গর্ভে বড় হচ্ছে। আর স্বভাবতই সেই সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন সাজাচ্ছিলেন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল হাই সিদ্দিক (৩৫)। কিন্তু সেই সন্তানের মুখ দেখার সৌভাগ্য হয়নি তাঁর। একমাত্র সন্তান পৃথিবীতে আসার আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার সঙ্গী কনস্টেবল আশরাফুল ইসলামের (৫০) সঙ্গে দায়িত্ব পালনের সময় ট্রাকের চাপায় নিহত হন দিনাজপুরের হাকিমপুর থানার এএসআই আবদুল হাই সিদ্দিক।
সিদ্দিকের ছোট ভাই আবু তালহা জানান, ২০১৫ সালের শেষের দিকে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কাচিনিয়া গ্রামের আয়েশা সিদ্দিকা আইরিনের সঙ্গে বিয়ে হয় সিদ্দিকের। চিকিৎসক জানিয়েছেন, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগস্ট মাসের ২২ তারিখে সিদ্দিক-আইরিনের প্রথম সন্তান পৃথিবীতে আসবে। তবে বাবার মুখটি আর কখনোই দেখা হবে না তার। অনাগত সন্তানের ভবিষ্যতের ভাবনায় এখন বারবার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন আইরিন।
নিহত এএসআই সিদ্দিক ও কনস্টেবল আশরাফুল সম্পর্কে বলতে গিয়ে হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সবুর আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি জানান, এএসআই সিদ্দিক খুবই ধার্মিক ছিলেন। সব সময় তিনি হাসিমুখে চলাফেরা করতেন। সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন। কাজের প্রতি ছিলেন ভীষণ দায়িত্বশীল। অন্যদিকে কনস্টেবল আশরাফুল ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী। থানার ফুলের বাগানটি তিনিই দেখাশোনা করতেন। নিজ হাতেই খুব যত্ন নিয়ে সাজিয়েছিলেন বাগানটি।
দুই সহকর্মীর এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না বলেও জানান ওসি।
দুই পুলিশ সদস্যকে চাপা দেওয়ার ঘটনায় ওই ট্রাক চালককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি। এ ছাড়া আটক করা হয়েছে ট্রাকটি। শিগগিরই এই ঘটনায় হওয়া মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে বলে জানান তিনি।
ছেলে সম্পর্কে বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত সিদ্দিকের বাবা আহম্মেদ আলী। তিনি বলেন, ২০০৬ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন সিদ্দিক। এরপর ঢাকা, বগুড়া, রাজশাহী হয়ে চলতি বছর জানুয়ারিতেই হাকিমপুর থানায় বদলি হয়ে আসেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে এএসআই আবদুল হাই সিদ্দিক ও কনস্টেবল আশরাফুল ইসলাম এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেল নিয়ে উপজেলা পরিষদ-চারমাথা সড়ক হয়ে থানায় ফেরার পথে স্থানীয় হীরামতি সিনেমা হলের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে দ্রুত গতিতে আসা একটি ট্রাক তাঁদের চাপা দেয়। এতে দুজনই মারাত্মকভাবে আহত হন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাঁদের দ্রুত উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসক তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সেখানে পৌঁছালে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।