অটোরিকশার ওপর ট্রেন, নিহত ৮
গাজীপুরে ডেমু ট্রেন একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই আটজন নিহত হন। এদের মধ্যে চারজন একই পরিবারের সদস্য এবং চালক ছাড়া বাকি তিনজনও ওই পরিবারের আত্মীয়স্বজন। তারা ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরছিল।
urgentPhoto আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা-জয়দেবপুর রেলপথের ধীরাশ্রম স্টেশনের আনুমানিক দেড় কিলোমিটার দূরে হায়দরাবাদ এলাকায় রেলক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন নরসিংদী জেলা সদরের জিতরামপুর এলাকার ফরিদ মিয়ার ছেলে এবং গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকার এম এম গার্মেন্টের শ্রমিক শাহ আলম (২৭), শাহ আলমের স্ত্রী পিয়ারা বেগম (২১), তাদের ছেলে ইয়াসিন (৪) ও মেয়ে সাদিয়া (৬), পিয়ারার বোন সফুরা বেগম (১২), শাহ আলমের ফুফাতো ভাই এবং শান্তিপুর গ্রামের মোসলেম মিয়ার ছেলে আলামিন (২৭), প্রতিবেশী আবুল খায়েরের ছেলে লিটন মিয়া (২২) এবং অটোরিকশার চালক নরসিংদীর বালাফুরের চর এলাকার আব্দুর রফিকের ছেলে মো. মোস্তাফা (২০)।
গাজীপুর রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফিরোজ আহমেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, দুপুর আড়াইটার দিকে হায়দরাবাদ এলাকার লেভেলক্রসিংয়ে ওঠার পর অটোরিকশাটি সেখানে প্রথমে আটকে যায়। পরে সেটি বন্ধও হয়। এ সময় ঢাকা থেকে একটি ডেমু ট্রেন গাজীপুরে আসছিল। অটোরিকশার চালক তাৎক্ষণিকভাবে এর দরজা খুলতে পারেননি।
ট্রেনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাটিকে প্রথমে ধাক্কা দেয়। এতে অটোটি ট্রেনের সাথে আটকে যায় এবং ট্রেনটি দক্ষিণখান এলাকা পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার অটোরিকশাটিকে দুমড়েমুচড়ে টেনে নিয়ে যায়। এ সময় অটোরিকশার যাত্রীরা রাস্তার পাশে বিভিন্ন জায়গায় ছিটকে পড়ে বলে জানান এসআই ফিরোজ আহমেদ।
খবর পেয়ে জিআরপি ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীর সহায়তায় উদ্ধারকাজ শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের গাজীপুরের উপপরিচালক আক্তারুজ্জামান লিটন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এলাকাবাসীর সহায়তায় আটটি লাশ বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নিহত শাহ আলমের চাচা শুক্কুর আলী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘শাহ আলম পরিবার নিয়ে বোর্ডবাজারের খাইলকৈর এলাকায় থাকেন। গ্রামের বাড়িতে ঈদ করে স্ত্রী-সন্তান ও আত্মীয়দের নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন।
জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) দাদন মিয়া জানান, ওই লেভেলক্রসিংয়ে কোনো প্রতিবন্ধক বা সংকেতের ব্যবস্থা ছিল না। এটি ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ ও এলাকাবাসীর করা লেভেলক্রসিং।
জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের মাস্টার মো. শহিদুল ইসলাম জানান, টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত রেললাইনের পাশে এ রকম অবৈধ ১৩টি রেলগেট রয়েছে। স্থানীয় সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা এলাকাবাসীর প্রয়োজনেই এগুলো করে নিচ্ছেন। এ জন্য দায়দায়িত্ব তাঁদের। এ ব্যাপারে কথা বললে আমাদের সমস্যা হয়। ওই রেলগেট যেহেতু তাঁরা বানিয়ে নিয়েছেন, এটা রক্ষণাবেক্ষণের দায়-দায়িত্বও তাঁদের।
কমলাপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মজিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু অবৈধ রেলগেট দিয়ে অটোচালক রেললাইন পার হওয়ার সময় ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নিহতদের লাশ পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঘটনার পর পরই গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান। এ ছাড়া অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ দিকে খবর পেয়ে নিহতদের স্বজনরা হাসপাতালে এসে ভিড় জমায়। তাদের আহাজারিতে হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।
এ ঘটনার ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা দুমড়েমুচড়ে রেললাইনের পাশে এক স্থানে পড়ে আছে। এর ভেতরে সামনে একটি লাশ পড়ে আছে। এ ছাড়া এক স্থানে দুটি শিশুর লাশ ও আরেক স্থানে আরেকটি শিশুর লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
নারী ও কয়েকজন পুরুষের লাশও রেললাইনের পাশে বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। স্থানীয় লোকজন ওই এলাকায় ভিড় করেছে। তারা ফায়ার সার্ভিসকে উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করেছে। লাশগুলো ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িতে তুলতে দেখা গেছে।