রোহিঙ্গা পরিচয় গোপন করে সুনামগঞ্জের নাগরিক
এবার সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাটে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা একই পরিবারের ১২ রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নাগরিক সনদ ও তিনজনকে জন্মসনদ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের গুটিলা গ্রামের তোতা মিয়ার বাড়ি থেকে তাঁদের আটক করা হয়। তবে তাঁরা বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নাগরিক সনদ ও জন্মসনদ নিয়েছেন।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হামলা-নির্যাতন-ধর্ষণের শিকার হয়ে প্রায় তিন লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছে। তাদের সবাইকে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালীর বনভূমিতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এসব রোহিঙ্গা যাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়তে না পারে, তার জন্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সরকার।
প্রশাসনের এ ঘোষণার মধ্যেই গত বুধবার রাতে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় একটি বাড়ি থেকে ২০ রোহিঙ্গা মুসলিমকে আটক করেছে পুলিশ। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলার মন্ডুকাদের বিল গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় পুলিশ এর বেশি আর কোনো তথ্য দেয়নি গণমাধ্যমকে।
এর মধ্যে সুনামগঞ্জের পুলিশ এই রোহিঙ্গা পরিবারটিকে আটক করার তথ্য জানায়। তাঁরা হলেন—মিয়ানমারের আকিদাবাদ জেলার মংদু থানার কুয়ান শিবং গ্রামের সাকির আহমদের ছেলে আবদুস সবুর (৫১), স্ত্রী আমিনা বেগম (৪২), ছেলে আবদুল হালিম (২৩), মেয়ে তালিহা আক্তার (১৫), মেয়ে হারিসা আক্তার (১৩), মেয়ে হালিমাতুস সাহিয়া (১১), মেয়ে সাবিহা আক্তার (৯), ছেলে আসলম শাহ (৭), মেয়ে উম্মা বেগম (২), আবদুল হালিমের স্ত্রী উম্মুল খাইরিন (২২) ও মেয়ে মোশারফা (১), হালিমের শ্যালক কাউছার (৭) প্রমুখ।
বাদাঘাট পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) তপন কুমার দাশ আজ শুক্রবার সকালে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রথমে স্থানীয় লোকদের মাধ্যমে জানতে পারি, বড়দল ইউনিয়নের গুটিলা গ্রামে একটি রোহিঙ্গা পরিবার অবস্থান করছে। পরে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই। কর্তৃপক্ষ খোঁজ-খবর নিতে বলে। পরে রাত ৯টায় তাঁদের ১২ জনকে আটক করে তাহেরপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁরা বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পাঁচটি নাগরিক সনদ ও তিনটি জন্মসনদ নিয়েছেন। এসব জন্মসনদ জব্দ করা হয়েছে।’
এসআই আরো জানান, স্থানীয় তোতা মিয়ার বাড়ি থেকে তাঁদের আটক করা হয়। তোতা মিয়ার ছেলে আল-আমীন চট্টগ্রামে পড়াশোনা করে। সেখানেই রোহিঙ্গা নাগরিক আবদুস সবুরের দুই ছেলে পড়াশোনা করত। সে সুবাদেই তাদের পরিচয় এবং বন্ধুত্ব হয়। পরে দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়।
এর সুবাদেই তিন মাস আগে আবদুস সবুর চট্টগ্রাম থেকে পরিবার নিয়ে গুটিলা গ্রামের তোতা মিয়ার বাড়িতে এসে আশ্রয় নেয় এবং স্থানীয়ভাবে কাজকর্ম করে দিনাতিপাত করছিল বলে জানান এসআই। তিনি আরো জানান, তোতা মিয়ার ছেলে এখনো চট্টগ্রামের মাদ্রাসাতেই পড়াশোনা করছেন।
১২ রোহিঙ্গা সদস্যকে আজকের মধ্যেই টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ।
নাগরিক সনদ ও জন্মসনদ দেওয়ার ব্যাপারে বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা আগে জানতাম না উনারা রোহিঙ্গা। ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনির উদ্দিন তাদের কাগজপত্র ঠিকঠাক করে আমার কাছে নিয়ে আসে। আমি তাতে স্বাক্ষর করি। এখানে আমার তো কোনো দোষ নেই।’
‘ইউপি সদস্য জানিয়েছিলেন, এই পরিবারের সদস্যরা আগে চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন। সেখানেও তাদের নাগরিক সনদ ছিল। সেখান থেকে বড়দলে এসে তাঁরা বাড়িঘর করে বসবাস শুরু করেন। এমনটিই আমার জানা ছিল’, যোগ করেন ইউপি চেয়ারম্যান।
তবে এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য মনির উদ্দিনের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।