রোহিঙ্গাদের জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কার্যক্রম
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য বেশ কিছু সেবা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। আজ বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অধিপ্তরের গৃহীত কার্যক্রমগুলো নিচে তুলে ধরা হলো :
১. রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা ও রোগ ব্যাধি চিকিৎসার জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মোট ১০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে চিকিৎসকদের উখিয়া ও টেকনাফে মেডিকেল টিমে কাজ করার জন্য সংযুক্ত প্রদান করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক গঠিত মেডিকেল টিমের সঙ্গে সমন্বয় করে উক্ত টিমগুলো কাজ করছে।
২. মেডিকেল টিমগুলো ৮/১০ প্রকার ওষুধ এবং তিন ধরনের অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী (কনডম, খাবার বড়ি, তিন মাস মেয়াদি ইনজেকশন) বিতরণ করছে।
৩. রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক কোনো জ্ঞান নাই এবং এ বিষয়ে তারা সম্পূর্ণ অসচেতন বিধায় শরণার্থীদের ক্যাম্পগুলোতে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কিত জ্ঞান প্রদান তথা কাউন্সেলিং এর জন্য ৮৬ জন Paid Volunteer (বেতনভুক্ত স্বেচ্ছাসেবী) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা পরিবার পরিকল্পনা কাউন্সেলিং ছাড়াও গর্ভবর্তী মায়েদের নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে গিয়ে গর্ভবতী মায়েদের চেকআপ ও নিরাপদ প্রসব সেবা নেওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করবেন।
৪. মেডিকেল টিম ছাড়াও FWC (ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার সেন্টার) এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে পরিবার পরিকল্পনাকর্মীদের মাধ্যমে অস্থায়ী তিন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
৫. আগত শরণার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গর্ভবর্তী মহিলা রয়েছে। তাদের প্রসব পূর্ববর্তী শারীরিক চেকআপ (ANC), নিরাপদ প্রসব সেবা এবং প্রসব পরবর্তী সেবা (PNC) নিশ্চিত করার জন্য উখিয়া ও টেকনাফে ৬টি FWC-তে ২৪/৭ প্রসব সেবার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উক্ত কেন্দ্রগুলোতে একজন স্যাকমো, একজন এফডব্লিউভি (পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক) ছাড়াও ইউএনএফপিএর (জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল) অর্থায়নে দুজন ডিপ্লোমা মিডওয়াইফ নিয়োজিত আছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৭৩টি নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হয়েছে। এ ছাড়া জরুরি প্রসূতি সেবার প্রয়োজন হলে অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজার মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র এবং কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফারের ব্যবস্থা আছে। উক্ত FWC-গুলোতে আরো ১২ জন মিডওয়াইফ সংযুক্তির জন্য নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরকে পত্র দেওয়া হয়েছে।
৬. রোহিঙ্গা শিশুদের ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) টিকা দেওয়ার জন্য এ অধিদপ্তরের ২০ জন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শককে (FPI) স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য সহকারীদের (HA) সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং এরই মধ্যে বিশেষ টিকাদান কার্যক্রম চলছে।
৭. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণকক্ষে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের একজন উপপরিচালককে ন্যস্ত করা হয়েছে এবং কক্সবাজারে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণকক্ষে উপপরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা, কক্সবাজারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
৮. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিবার পরিকল্পনা সেবা এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
৯. এসব সেবা দেওয়ার জন্য বাড়তি ওষুধ এবং তিন প্রকার জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে এবং আরো ওষুধ সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
১০. স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গত ১৮ এবং ১৯ সেপ্টেম্বর তারিখে কক্সবাজার অবস্থান করে সরেজমিনে গিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য সেবা কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ত্রাণ সচিব এবং Refugee, Relief & Repatriation Commissioner (RRC) -এর সঙ্গে সভা করে উক্ত কার্যক্রমগুলো চালু করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
১১. পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে একটি কন্ট্রোল সেল খোলা হয়েছে। উক্ত সেল থেকে সার্বক্ষণিক কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য সেবা বিষয়ে মনিটরিং ও সমন্বয় করা হচ্ছে।
কন্ট্রোল সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পদবি ও ফোন নম্বর :
সহকারী পরিচালক (সমন্বয়)-০১৭১২ ১৮০৫৬০ (মোবাইল), ০২-৯১২১৭৯৩ (অফিস) এবং সহকারী পরিচালক (মনিটরিং)- ০১৭১৫ ২৩৫১৪৮ (মোবাইল)