ছিটমহল ছিল ১৬২, রেকর্ড বিনিময় ৬৩ মৌজার!
বাংলাদেশ ও ভারতীয় ভূখণ্ডে মিশে যাওয়া ১৬২টি ছিটমহলের মাত্র ৬৩টি মৌজা রেকর্ড বিনিময় করতে পেরেছে উভয় দেশ। এর মধ্যে এত দিন বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ১১১টি ছিটমহলের ৪৪টি মৌজা রেকর্ড হস্তান্তর করেছে ভারত। অপরদিকে ভারতের ভেতরে থাকা ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহলের মধ্যে ১৯টি রেকর্ড দেওয়া হয়েছে ভারত সরকারকে।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরের ওপারে ভারতের চ্যাংরাবান্ধায় অনুষ্ঠিত ডিসি-ডিএম পর্যায়ের যৌথ বৈঠক থেকে ফিরে বুড়িমারী জিরোপয়েন্টে এ তথ্য জানান বাংলাদেশি ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের প্রধান ও লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান। বাকি ৯৯টি মৌজা রেকর্ড পুনরায় খুঁজতে একে অপরকে অনুরোধ জানিয়েছে উভয় দেশ। প্রতিটি ছিটমহল এক একটি মৌজা হিসেবে পরিচিত।
গত ৭ জুলাই বুড়িমারীতে অনুষ্ঠিত উভয় দেশের একটি যৌথ বৈঠকে উভয় দেশে থাকা জমির পুরনো রেকর্ড খোঁজার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এ পর্যন্ত ওই ৬৩টি মৌজা রেকর্ড পাওয়া গেছে। এদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারত যেতে ইচ্ছুক কিছু ছিটমহলবাসী যাঁরা বারবার নিজেদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথা জানিয়েছেন তাঁদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ১৭ আগস্ট একটি ভারতীয় টিম এ দেশে এসে সরেজমিনে তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেবে।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান আরো জানান, গত ৬ থেকে ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত যৌথজরিপ চলাকালে হাসপাতালে থাকার কারণে পঞ্চগড়ের একটি ছিটমহলের একজন নারী ও এক শিশু জরিপে অংশ নিতে না পারলেও পরবর্তিতে তারা ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন। তবে বিষয়টি নিয়ে গতকালের বৈঠকে সুরাহা না হওয়ায় এটি বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাউন্ডারি ওয়ার্কিং কমিটির কাছে পাঠানোর হবে। এদিকে যারা ভারত যাবেন তাদের বিশেষ ট্রাভেল পাশের মাধ্যমে আগামী ১ থেকে ৩০ নভেম্বরের মাধ্যমে পাঠানো হবে এবং এ জন্য লালমনিরহাটের ছিটবাসীদের যাতায়াতে বুড়িমারী-চ্যাংরাবান্ধা, কুড়িগ্রামের সাহেবগঞ্জ-বাঘভাণ্ডার ও পঞ্চগড়ের চিলারহাট-হলদিবাড়ী পয়েন্ট ব্যবহার করা হবে। ভারতগামী লোকজন এবং তাদের সাথে নিয়ে যাওয়া অস্থাবর সম্পতি পরিবহনের সুবিধার্থে প্রয়োজনে অস্থায়ী সড়কও নির্মাণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ভারতীয় ছিটমহলের কোনো কোনো নাগরিককে জোর করে ভারতে যেতে চাপ দিয়ে জরিপকারীদের মুখোমুখি করা হয়েছে আবার কাউকে সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে- ভারতীয় কিছু গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশ-প্রচারের বিষয়টিও বৈঠকে উঠে এলে উভয় পক্ষ এসব সঠিক নয় বলে মতামত দিয়েছে বলে জানিয়েছেন লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের ওপারে ভারতের কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা ব্লক ডেভেলপমেন্ট কার্যালয়ে দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত যৌথ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের ১৬ সদস্যের প্রতিনিধিদলের বিপরীতে ভারতীয় ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন কোচবিহারের জেলা শাসক (ডিএম) পি উল্পানাথন। বাংলাদেশি দলটিতে আরো ছিলেন কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও নীলফামারীর জেলা প্রশাসকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।