গৌরীপুরের সেই শিক্ষক দম্পতিকে নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি
ময়মনসিংহ-৩ আসনে (গৌরীপুর) আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান ফকির ও তাঁর লোকজনের হাতে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠা সেই শিক্ষক দম্পতিকে নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি। সেই সঙ্গে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও গৌরীপুর শিক্ষক সমিতির কার্যালয় দখলমুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ময়মনসিংহ শাখা আজ শুক্রবার সকালে জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কাশেম। বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সমিতির সভাপতি জাহানারা খানম। এ সময় নির্যাতিত শিক্ষক দম্পতি এ কে এম মাজহারুল আনোয়ার ফেরদৌস ও রোজী সুলতানা, তাঁদের সন্তান মুতাসিম মাহির রাফিদ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ কে এম মাজহারুল আনোয়ার ফেরদৌস গৌরীপুরের ধরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। একই সঙ্গে তিনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। তাঁর স্ত্রী রোজী সুলতানা গৌরীপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তাঁদের ছেলে মুতাসিম মাহির রাফিদ ওই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ফার্স্টবয় ছিল। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের সুপারিশে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে ঢাকার উপপরিচালক গত ৩১ মার্চ ২০১৫ গৌরীপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ কে এম মাজহারুল আনোয়ারকে বদলির আদেশ জারি করেন। কিন্তু ময়মনসিংহ আসনের এমপির বাধার জন্য আজ পর্যন্ত তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে পারেননি। কেন তিনি এমপির অনুমতি ছাড়া বদলির আবেদন করলেন সেই ক্ষোভেই এমপির নির্দেশে গত ৫ জুন রাস্তায় ওই শিক্ষককে আক্রমণ এবং ধরে নিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। পরে তাঁকে বাথরুমে আটকে রাখা হয়। তা ছাড়া ওই শিক্ষকের মোটরসাইকেল, মোবাইল ও সঙ্গে থাকা পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে যায়। তা ছাড়া তাঁর কাছে দুটি শীতাতপ যন্ত্র (এসি) দাবি করেন। ৭ জুলাই শিক্ষক ভয়ে বাধ্য হয়ে দুটি এসি দেন। ২২ জুলাই মোটরসাইকেল আনতে গেলে আবারও তাঁকে মারধর করেন। এমপি ফকিরের নির্দেশে তার চতুর্থ শ্রেণির ছেলেকে ছাড়পত্র (টিসি) দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং কোনো স্কুলে ভর্তি না করতে মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়। এ কারণে শিশুটিকে এখনো কোনো বিদ্যালয়ে ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। শিশুটি তার শিক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষক দম্পতিকে বারবার প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির গৌরীপুর উপজেলা শাখার কার্যালয়ের ঘর অবৈধভাবে দখল করে রাখা হয়েছে। তাই নিরুপায় হয়ে ওই শিক্ষক ৫ আগস্ট দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির নেতারা শিক্ষক দম্পতির নিরাপত্তা, সন্তানের লেখাপড়ার সুযোগ, বদলি করা শিক্ষককে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের ব্যবস্থা, হামলাকারী সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও গৌরীপুর শিক্ষক সমিতির কার্যালয় দখলমুক্ত করার দাবি জানান। শিগগিরই সমাধান না হলে শিক্ষক সমিতি জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটি কঠোর আন্দোলনে যাবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফজলে রাব্বী আল ফারুক, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁঞা, যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল কবীর, সহ সম্পাদক শিব্বির আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ গিয়াসউদ্দিন, অর্থ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খান নাছিম, মিডিয়া সম্পাদক নুরুল হক, সহ-প্রচার সম্পাদক আলাল আহমেদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক সালমা সুলতানা, কাব স্কাউট সম্পাদক জিকরুল ইসলামসহ বিভিন্ন উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।