সরষে ফুলের হলুদে রাঙা দিনাজপুরের মাঠ
সরষে ফুলের মাঠ শীতকালের অন্যতম এক অপরূপ দৃশ্য। মাঠের পর মাঠ সরষেক্ষেত প্রকৃতিতে যেন অন্য এক মাত্রা এনে দেয়। তাই তো দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলায় এখন চোখ জুড়ানো হলুদের সমারোহ, চলছে সরষে উৎসব।
সরষে চাষের অনুকূল পরিবেশ থাকায় গত বছরগুলোর তুলনায় এই বছর আবাদ হয়েছে অনেক বেশি। এই বছর জেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছে কৃষি সম্পাসারণ অধিদপ্তর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, চলতি বছরে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে। এর স্থলে চাষ হয়েছে আট হাজার হেক্টর জমিতে। যা গত বছর ছিল পাঁচ হাজার হেক্টর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানান, রবিশস্য চাষের এবার অনুকূল পরিবেশ ছিল। এমন প্রাকৃতিক পরিবেশ পেলে মানুষ সরিষা আরো বেশি করে আবাদ করবে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, সরিষা চাষে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে। কৃষকদের অল্প সময়ে এই সরিষা চাষের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে দুই ফসলি জমি তিন ফসলি জমিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।
বিভিন্ন গ্রামের সরিষা চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার প্রতি বিঘা জমি থেকে ছয় থেকে সাত মণ সরিষা উৎপাদন হবে। সরিষা চাষের অনুকূল পরিবেশের কারণে এবার চলতি রবি মৌসুমে খানসামা উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে।
সদর উপজেলার সরিষা চাষি হরিদাস রায় জানান, প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষে খরচ হয় সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা। প্রতি মণ সরিষা বিক্রি করা যায় দেড় হাজার টাকা করে। সেই হিসাবে প্রতি বিঘাতে সাত মণ সরিষা উৎপাদন হলে বিঘা প্রতি সাড়ে সাত হাজার টাকা লাভ করা যায়।
এ ছাড়া সরিষা আবাদে তেমন সেচের প্রয়োজন হয় না। আর মাত্র দুই মাস সময়ে সরিষা আবাদ করা যায় বলে এটি চাষিদের জন্য খুবই লাভজনক ফসল। তবে সরিষার বড় শত্রু জাব পোকার কারণে লোকসান হতে পারে। তবে এই বছর জাব পোকার আক্রমণ না থাকার কারণে সরিষার ফলন ভালো হয়েছে বলেও জানা যায়।
খানসামা উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের ভান্ডারদহ গ্রামের সরিষা চাষি আফসার আলী বলেন, ‘নিজের প্রয়োজন মেটাতে প্রতি বছর এক বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। এবার দুই বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। আশা করছি অন্য বছরের তুলনায় এবার সরিষার ফলন ভালো হবে। নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার সরিষা বিক্রি করতে পারব।’
সরিষার তেলের রয়েছে অনেক ওষুধি গুণ। আর সরিষার খৈল জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে। সরিষার গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া সরিষার আবাদ করলে জমিতে সরিষার পাতা পড়লে জমির উর্বরতা বাড়ে।