মুঠোফোনের নম্বর দেওয়ায় স্কুলছাত্রীকে হত্যা!
ঝিনাইদহে মুঠোফোনের নম্বর দিয়ে প্রেম করতে সহযোগিতা করার অভিযোগে এক স্কুলছাত্রী ও তাঁর বাবা-মাকে ব্যাপক মারধর করেছেন স্বজনরা। দুদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গত বৃহস্পতিবার ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই স্কুলছাত্রী মারা গেছে।
ওই স্কুলছাত্রীর নাম বৈশাখী খাতুন (১৪)। সে ঝিনাইদহ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নীচ-মথুরাপুর মহল্লার আবদুস সামাদ পানুর মেজো মেয়ে। সে স্থানীয় আনোয়ার জাহিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ত।
আজ শুক্রবার দুপুরে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে বৈশাখীর লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে গ্রাম্য কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
নিহতের বড় বোন সাবিনা খাতুন বাদী হয়ে তাঁর আপন চাচা, চাচিসহ চারজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ৪। এদিকে ঘটনার পর থেকে আসামিরা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান। তিনি বলেছেন, গত বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বৈশাখীকে পিটিয়ে ও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় প্রথমে তাকে ঝিনাইদহ ও পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়।
ওসি আরো জানান, একই ঘটনায় বৈশাখীর বাবাকে মারপিট করে বুকের হাড় ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা সবাই নিহতের স্বজন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
হামলার ব্যাপারে বৈশাখীর বড় চাচা আবদুর রাজ্জাকের মেয়ে শরিফা খাতুন বলেন, তাঁদের ছোট চাচা আলমগীর হোসেনের শ্যালক মুদি দোকানি উজ্জ্বলের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার পার কেষ্টপুর গ্রামের বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া মিশলার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মোবাইল ফোনে মিশলার সঙ্গে উজ্জ্বলের নিয়মিত কথা হতো। মিশলা শরিফার আপন খালাতো বোন। সেই সূত্রে উজ্জ্বলের সঙ্গে প্রেম হলে সম্পর্ক পাল্টে যায় তাঁদের। গত মঙ্গলবার এ ঘটনা পারিবারিকভাবে ফাঁস হয়ে যায়। আলমগীর হোসেন এর জন্য বৈশাখীকে দায়ী করেন। তিনি সন্দেহ করেন, বৈশাখী উজ্জ্বলকে মিশলার মুঠোফোন নম্বর দিয়েছে। এ কারণে তাদের মধ্যে প্রেম হয়েছে। এ নিয়ে বৈশাখীর বাবা আবদুস সামাদ পানু ও চাচা আলমগীর হোসেনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়।
শরিফা খাতুন জানান, গত বুধবার মাগরিবের নামাজের পরে চাচা আলমগীর হোসেন ও তাঁর স্ত্রী নাসরীন, শ্যালক উজ্জ্বল ও শাশুড়ি মিলে বৈশাখীর ওপর হামলা চালায়। ওই সময় বৈশাখী তাদের (শরিফা) ঘরে ছিল। একপর্যায়ে ওড়না গলায় পেঁচিয়ে বৈশাখীকে মারাত্মকভাবে আহত করে। খবর পেয়ে বৈশাখীর বাবা, মা, বোন এলে তাঁদেরও পিটিয়ে জখম করা হয়। একপর্যায়ে বৈশাখীকে পিটিয়ে ও গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে তারা। এ সময় বৈশাখীর হাত-পা দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। বৈশাখী মারা গেছে মনে করে হামলাকারীরা চলে যায়।
রাত ১০টার দিকে আহত বৈশাখী ও তাঁর বাবাকে ভর্তি করা হয় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার সকালে বৈশাখীর অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে ফের স্থানান্তর করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ঢাকা রওনা হওয়ার আগেই বেলা ১১টার দিকে মারা যায় বৈশাখী।
ঝিনাইদহ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মহিউদ্দিন জানান, প্রেমে সহযোগিতা করার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
নীচ-মথুরাপুর মহল্লার লোকজন জানান, রাজমিস্ত্রি, দোকানদারি ও দিনমজুরি করে সংসার চলে বৈশাখীদের। এর মধ্যেও বৈশাখী পড়ালেখায় মনোযোগী ছিল। সে ভালো ছাত্রী ছিল।
সদর থানার ওসি জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে বৈশাখীর লাশ ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে আনা হয় এবং শুক্রবার দুপুরে ময়নাতদন্ত করানো হয়। তিনি আরো জানান, প্রাথমিক তদন্তে পিটিয়ে ও ওড়না গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
এ ব্যাপারে ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই নারীসহ চারজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়েছে। তবে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা যায়নি।