ভ্যানচালককে কুপিয়ে খুন, পরে ‘খুনিকে’ পুড়িয়ে হত্যা
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় এক ভ্যানচালককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এর জের ধরে হত্যায় জড়িত সন্দেহে এক ‘মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে’ পুড়িয়ে মেরেছে গ্রামবাসী।
আজ বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার শালবাগান ও কবিরাজহাট এলাকায় এ দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
নিহত ভ্যানচালকের নাম সুরুজ মিয়া। আর সন্দেহভাজন হিসেবে যাকে হত্যা করা হয়েছে, তার নাম রবিউল ইসলাম। তাদের উভয়ের বাড়ি উপজেলার গ্রামে শালবাগান এলাকায়। রবিউলের বিরুদ্ধে এর আগেও মানুষকে কুপিয়ে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে।
এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তোফাজ্জল হোসেন জানান, আজ ভোরে স্থানীয় মসজিদে ফজরের নামাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন সুরুজ মিয়া। এ সময় তিনি হামলার শিকার হন। স্থানীয়রা দাবি করেছে, রবিউল এ কাজ করেছে। এতে সুরুজ ঘটনাস্থলেই মারা যান।
এ ঘটনার পর একই এলাকার একটি মুরগির ফার্মের নৈশপ্রহরী শহিদ ও তাঁর তিন বছরের শিশুপুত্র একরামুল হক শামিমকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। সেটিও রবিউল করেছে বলে দাবি করেছে স্থানীয় জনতা। এ দুটি ঘটনা ঘটিয়ে রবিউল পালিয়ে যায়। আহত দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান ইউএনও।
সুরুজ মিয়ার হত্যার খবরে জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে ভোর থেকে আগুন জ্বালিয়ে দিনাজপুর-পঞ্চগড় মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে সকাল পৌনে ৮টার দিকে রবিউলকে উপজেলার কবিরাজহাট এলাকা থেকে আটক করে জনতা। পরে তাকে গণধোলাই দিয়ে শরীরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সকাল ৯টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের সহায়তায় আগুন নিভিয়ে উদ্ধার করা হয় রবিউলের পোড়া দেহ।
অবরুদ্ধ রাস্তায় প্রায় তিন ঘণ্টা পর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জনতা রবিউল ইসলামের বসতবাড়িও গুঁড়িয়ে দিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ সময় জনতার ক্ষোভ থেকে রক্ষা পেতে রবিউলের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজন পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, কিছুদিন আগে সুরুজ মিয়ার ভাতিজা চা দোকানদার বসির উদ্দিনকেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে ঘটনায় রবিউল ছিল প্রধান সন্দেহভাজন। এ ছাড়া আরো কয়েক ব্যক্তিকে রবিউল কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। সে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল বলে দাবি করে জনতা।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তা আকতার হামিদ খান জানান, সকালে তিনি খবর পান, এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি এক পথচারীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। পরে স্থানীয় জনগণ সেই মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে পোড়া দেহ উদ্ধার করেন।
এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন রাখা হয়েছে পুলিশ।