ভয়ঙ্কর স্বামী!
স্ত্রীকে লাঠি ও রড দিয়ে পিটিয়েছেন স্বামী। এরপর স্ত্রীর দুই পা ও হাতের আঙুলও থেঁতলে দিয়েছেন। এখানেই থেমে যাননি। সিরিঞ্জের মাধ্যমে বিষাক্ত ওষুধ স্ত্রীর শরীরে ঢোকানোর চেষ্টা করেন তিনি। প্রতিবেশীরা চলে আসায় স্ত্রী বেঁচে যান। আর স্বামী তখনই পালিয়ে যান।
নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর কলোনিপাড়া মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে। আহত মাহবুবা আখতার ববি (২৩) এখন পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। মাহবুবার স্বামী জালাল উদ্দিন ঘটনার পর থেকে পলাতক।
মাহবুবা অভিযোগ করেন, যৌতুকের টাকা এনে না দেওয়ায় স্বামী জালাল উদ্দিন তাঁকে এভাবে নির্যাতন করেন। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার নির্যাতন করার একপর্যায়ে বিষাক্ত ওষুধ ঢুকিয়ে তাঁকে (মাহবুবা) মেরে ফেলার চেষ্টা করেন জালাল উদ্দিন। এ ঘটনায় পরে গত রোববার পত্নীতলা থানায় জালালসহ শ্বশুরবাড়ির আরো কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন মাহবুবা।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, তিন বছর আগে জেলার মহাদেবপুর উপজেলার পৈশাতা গ্রামের বাসিন্দা মাহবুবা আখতার ববিকে মোটা অঙ্কের যৌতুকের বিনিময়ে বিয়ে করেন পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর কলোনিপাড়া মহল্লার জালাল উদ্দিন। জালাল পেশায় একজন ফল ব্যবসায়ী। বিয়ের পর থেকেই ব্যবসার পরিসর বাড়ানোর নাম করে মাহবুবার বাবার কাছ থেকে যৌতুকের অতিরিক্ত টাকা দাবি করছিলেন জালাল। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ দেখা দিলে পারিবারিকভাবে দুই পক্ষের লোকজন নিয়ে বেশ কয়েকবার বৈঠকও হয়। কিন্তু তাতে কোনো সমাধান আসেনি।
মাহবুবা বলেন, ‘কারণে-অকারণে প্রায়ই নির্যাতন চালিয়ে আসছে জালাল। এমনকি ব্যবসায়ী অংশীদার ও পাওনাদারদের টাকা না দেওয়ার ফন্দি হিসেবে আমাকে দিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করার ষড়যন্ত্র করে। এসব কাজ না করাতে নেমে আসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।’
মাহবুবা আরো বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি ফিরে হঠাৎই ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরে বন্দি করে লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে গোপনাঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে ক্ষত বিক্ষত করে। একই সঙ্গে দুই পা ও হাতের আঙুলগুলো থেঁতলে দেয়। পরে একটি সিরিঞ্জে করে বিষাক্ত ওষুধ শরীরে ঢোকানোর চেষ্টা করলে চিৎকার দেই। আওয়াজ শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে।’
মাহবুবার প্রতিবেশী ফজলুর রহমান, মৌসুমী আকতার ও জয়নব বানু জানান, মাহবুবাকে প্রায়ই মারধর করে জালাল। সবশেষ বৃহস্পতিবার মাহবুবাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই ইনজেকশন দেওয়ার চেষ্টা করে জালাল।
পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ বলেন, ‘মারধরের কারণে মাহবুবার গলা, বুক ও পিঠসহ বিভিন্ন অঙ্গ রক্তাক্ত ও জখম হয়েছে। পা ও হাতের আঙুলগুলো ফেটে গেছে। তাঁকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।’
এদিকে এ ঘটনায় মাহবুবা নিজেই বাদী হয়ে পত্নীতলা থানায় স্বামী জালালকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে পত্নীতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিম উদ্দীন জানান, থানায় মামলা দায়ের হওয়ার পর থেকেই আসামিরা পালিয়ে আছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।