ছেলে দেখাশোনা করে না, তারপর যা করলেন বাবা-মা
একটাই ছেলে। মেয়ে দুজন। বিয়ের পর মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি চলে যায়। মো. ইয়াকুব আলী ও তাঁর স্ত্রী মোছা. জিন্নাতুন বেগমের বিশ্বাস ছিল, ছেলে তাঁদের দেখবে। কিন্তু বিয়ের পর ছেলে নিজের সংসার নিয়ে আলাদা হয়ে যায়।
নিজেদের শেষ পুঁজিটুকু দিয়ে পাঁচশ হাঁসের বাচ্চা কেনেন ওই দম্পতি। একেবারে নিজেদের সন্তানের মতো করে যত্ন করেন এগুলোর। ওই হাঁসের খামারেই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। ইয়াকুব ও জিন্নাতুন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের জয়গঞ্জ-ঝাড়বাড়ী খেয়াঘাটের আত্রাই নদীর বালুচরে ছোট পরিসরে খামার করেছেন ইয়াকুব আলী ও তাঁর স্ত্রী জিন্নাতুন বেগম। তারই পাশে ছোট্ট একটা টিনের ঘর। সেখানেই থাকেন ওই দম্পতি।
মাত্র একদিনের হাঁসের বাচ্চা কিনে সন্তানের মতই আদর-যত্ন করে বড় করে তুলেছেন হাঁসের খামার। দিন-রাত হাঁসের বাচ্চাগুলোকে পরিচর্যার মাধ্যমে বড় করে তুলছেন।
ইয়াকুব আলী বলেন, ‘আমার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। মেয়ে দুটির বিয়ে দিয়েছি। আমার ছেলে বউ-বাচ্চা নিয়ে আলাদা খায়। আমরা স্বামী-স্ত্রী বৃদ্ধ মানুষ। আমাদের দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই। তাই আমাদের জীবনের যেটুকু পুঁজি ছিল, তাই দিয়ে আমি ৫০০ হাঁসের বাচ্চা কিনে খামার করি।’ মাত্র দুই মাসে সেই হাঁসের খামারে লাভের মুখ দেখছেন ইয়াকুব আলী।
সারা দিন হাঁসের পেছনে সময় দেন ইয়াকুব আলীর স্ত্রী জিন্নাতুন বেগম। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই বয়সে অন্যের বাড়িতে কাজ করার মতো শক্তি-সামর্থ্য নেই। আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে বুদ্ধি করে হাঁসের খামার দিই। আত্রাই নদীতে দিনের বেলায় হাঁসগুলো পানিতে থাকে। বিকেল ও সন্ধ্যায় হাঁসগুলো খামারে নিয়ে এসে খাবার দিই। প্রতিটি হাঁসের বাচ্চা (একদিনের বাচ্চা) ৩০ টাকা করে কিনেছিলাম। মাত্র দুই মাসে সেই হাঁসের বাচ্চাগুলোর প্রতিটির দাম হয়েছে ১৮০ টাকা করে।’
হাঁসের খামারে রোগবালাই সম্পর্কে ইয়াকুব আলী বলেন, ‘আমরা পাঁচশ হাঁসের বাচ্চা কিনেছিলাম। বর্তমানে সাড়ে ৪০০ হাঁস খামারে আছে। বাকিগুলো রোগে মারা গেছে। তবে নিয়মিত উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শ ও চিকিৎসায় বর্তমানে বাকিগুলো ভালো আছে।’
এ বিষয়ে খানসামা উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. বিপুল কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের দেশে হাঁসের মাংসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। হাঁস পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। আমাদের দেশে খাকি ক্যামবেল, বেইজিং জাত হাঁস পালন বেশি হয়।’
রোগবালাই সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘হাঁসের ডাক প্লেগ, ফাউল কলেরা, ডাক ভাইরাল হেপাটাইটিস রোগ হয়। এসব রোগের সরকারিভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।’
ইয়াকুব জানান, হাঁসগুলো যত ডিম দেয়, তা বিক্রি করে সংসার চলে। ভবিষ্যতে পর্যায়ক্রমে আরো বৃহৎ আকারে খামার গড়ে তোলার ইচ্ছে আছে তাঁর।