সংলাপ হতেই পারে : তথ্যমন্ত্রী
‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে উন্নত ও শক্তিশালী করার জন্য আলোচনা-সংলাপ হতেই পারে’ বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তবে তিনি বলেছেন, ‘শুধু একটি নির্বাচনের জন্য, কোনো অ্যাডহক (অস্থায়ী) ব্যবস্থার ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা কোনোভাবেই যুক্তিসম্মত নয়। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে উন্নত ও শক্তিশালী করার জন্য কোনো ধরনের স্থায়ী প্রস্তাব খালেদা জিয়া দেননি, দিতেও পারছেন না।’
আজ রোববার সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। এতে তিনি গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া জানান। তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া যা বলেছেন, তা ডাহা মিথ্যা। তিনি নির্বাচনের যে ফর্মুলা দিয়েছেন, তা যুক্তিসংগত নয়।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জায়গা সংলাপের টেবিল নয়, কাশিমপুর কারাগার। এ মুহূর্তে নির্বাচন দেশের কোনো সমস্যা না। আগুন, সন্ত্রাস, নাশকতা, জঙ্গিবাদ দেশের প্রধান সমস্যা।’ তিনি বলেন, ‘৬৭ দিনে দল-মত নির্বিশেষে দেশের সাধারণ মানুষ, সংবাদ-গণমাধ্যম, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার বেগম খালেদা জিয়াকে এই নৃশংস আগুন-সন্ত্রাস-সহিংসতা-পৈশাচিকতা-নাশকতা-অন্তর্ঘাত বন্ধ করার জন্য আহ্বান, অনুরোধ, আবেদন, নিবেদন করেছে।’
‘সকলের আশা ছিল, বেগম খালেদা জিয়ার নিষ্ঠুর হৃদয়ে সামান্য হলেও রহম আসবে। তিনি মানুষের কান্না-আহাজারি শুনতে পাবেন। বাতাসে আগুনে পোড়া লাশের গন্ধ তাঁর মন পরিবর্তন করবে। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে তিনি তাঁর তথাকথিত অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে দেশবাসীসহ সকলকে চরম হতাশ করেছেন। তিনি সাধারণ মানুষ, গণমাধ্যম, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে তাঁর একগুঁয়েমি বজায় রেখেছেন।’ বলেন তথ্যমন্ত্রী।
‘কোলে তুলে ওনাকে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে...’
খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ তুলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওনার ভাবখানা দেখে দেশের কারোই বুঝতে বাকি নেই যে, সোনার থালায় করে রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ে ওনার পাতে তুলে না দেওয়া হয় বা সোনার পালকিতে চড়িয়ে বা কোলে করে তুলে ওনাকে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত তিনি আগুন-সন্ত্রাস ও মানুষ পোড়ানোর দুষ্কর্ম বন্ধ করবেন না।’ তিনি বলেন, ‘কোনো যুক্তি-বুদ্ধি-সভ্যতা-মানবতা-আইনকানুন-সংবিধান-আবেদন-নিবেদন-অনুনয়-বিনয়-কান্না-আহাজারির কোনোই মূল্য বেগম জিয়ার কাছে নেই। উনি বিশ্ব ইজতেমা, পরীক্ষা, পূজা, ঈদে মিলাদুন্নবীর কোনো কিছুরই ধার ধারেন না।’
‘আত্মসমর্পণে বাধ্য করবে’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার শক্ত হাতে সকল সন্ত্রাস-নাশকতা-অন্তর্ঘাত মোকাবিলা করে দেশকে সচল রেখেছে। জনজীবনে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে এনেছে। দেশে শান্তি ও স্বাভাবিকতা বজায় রাখা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার যা যা করার দরকার, তাই তাই করবে।’
মন্ত্রী জানান, সরকার আগুন-সন্ত্রাসীদের কাছে, জঙ্গিবাদীদের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না; বরং আগুন-সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত ও আত্মসমর্পণে বাধ্য করবে।
‘নির্বাচন দেশের কোনো সমস্যা না’
সংবাদ সম্মেলনে হাসানুল হক ইনু আরো বলেন, ‘এ মুহূর্তে নির্বাচন দেশের কোনো সমস্যা না। আগুন-সন্ত্রাস-নাশকতা-জঙ্গিবাদ দেশের প্রধান সমস্যা। সবার আগে আগুন-সন্ত্রাস-নাশকতা-জঙ্গিবাদ দমন ও নিশ্চিহ্ন করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়া বলেছেন, সরকার সংকট দীর্ঘায়িত করছে। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, সরকার কোনো সংকট সৃষ্টি করেনি। বেগম খালেদা জিয়াই আগুন-সন্ত্রাস-নাশকতা-অন্তর্ঘাতের মাধ্যমে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, দেশকে অচল করে, দেশকে সংবিধানের বাইরে ঠেলে দিয়ে, অস্বাভাবিক সরকার আনার জন্য সংকট সৃষ্টির অপপ্রয়াসে লিপ্ত।’
তথ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘খালেদা জিয়া তাঁর সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করতে দেননি; বরং তাঁর নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীদের দিয়ে সাংবাদিকদের বের করে দিয়েছেন। উনি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে ভয় পান।’
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা তছির আহাম্মদসহ তথ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।