অলটারনেট কিছু ছিল না : সেলিম ওসমান
ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ এনে নারায়ণগঞ্জের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে কান ধরে ওঠ-বস করানোর ঘটনায় সারা দেশেই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ শিক্ষকসমাজ এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
তবে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান দাবি করেছেন, ‘এর বাইরে আমার অলটারনেট কিছু করার ছিল না।’
urgentPhoto
প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি এক সাংবাদিকের সঙ্গে ফোনে আলাপকালে নিজের অবস্থান তুলে ধরে সেলিম ওসমান এ দাবি করেন। এ সময় তিনি কিছু গণমাধ্যম বিষয়টি নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ করছে বলেও অভিযোগ করেন।
গত ১৩ মে, শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার কল্যাণদি এলাকার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তর বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ এনে কান ধরে ওঠ-বস করিয়ে শাস্তি দেন জাতীয় পার্টির স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত বলেছেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। ধর্ম নিয়ে কোনো কটূক্তি তিনি করেননি।
এ ঘটনার ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। শিক্ষকসমাজের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আজ বলেছেন, তিনি এতে খুবই বিব্রত ও লজ্জিত। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ ধরনের ঘটনা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ঘটনার তদন্ত হবে।
এ ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে ওই শিক্ষক এবং জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ।
আলোচিত এ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেন, ‘কিছুই হয় নাই। ক্লাস নাইনের একটা ছেলেকে মারছিল রবিবার দিন। এমনভাবে মার দিছে ছেলেটা ফিট হয়ে গেছে। ঠিক আছে, এমন হলে আইন আছে বিচার হবে। তো, ছেলের মা একটা লিখিত অভিযোগ দিছে বিচারের জন্য। স্কুল কমিটি শুক্রবার ডেট দিছে এটা বিচারের জন্য। শুক্রবারে যখন বিচারের ডেট দিছে, বিচারটা করে নাই। ও এখানে একটা কথা বলছে, যখন মারে তখন বলছে, উচ্চারণ তো করতে পারব না, আল্লাহ সম্পর্কে কটূক্তি করছে এবং মুসলমান সম্পর্কে কটূক্তি করছে। ছেলেটাকে যখন মারে, তখন হে আল্লাহ, বাঁচাও আল্লাহ বলছে। তখন সে (প্রধান শিক্ষক) আল্লাহ ও রসূল সম্পর্কে কটূক্তি করছে। এই তোমার গ্রামের মানুষ গিয়া ঘেরাও দিছে। সেখানে তোমার পাঁচ-সাত হাজার মানুষ হইয়া গেছে। ঘটনা ১১টার সময়, শুক্রবার ১১টা। এই অবস্থা হইছে, আমি থানায় ফোন দিছি, প্রটেকশন দাও। তো, এর মধ্যে একটা গণধোলাই সে খাইয়া ফেলছে। তাড়াতাড়ি শতেকখানেক পুলিশ গিয়া প্রটেকশন দিয়া তারে ঘরে বন্ধ করে দিছে। ওখন তো পুলিশ আর বাইর করতে পারে না ওরে।’
‘আমি বললাম, ওরে বন্ধ কইরা রাখ, আমি আসতাছি। বন্দরে আমার একটা মিটিং ছিল, আমি গেছি। চারটার সময়ে গেছি। গিয়া দেখি পাবলিক উত্তেজিত। কোনো অবস্থাতেই পুলিশ ওরে নিবে না। আর ও (প্রধান শিক্ষক) মারধর খাইছে। ওরে জুতা দিয়া পিটাইব, ওরে রাস্তায় ছাইড়া দিতে হবে, ওরে দেইখা নিব। আল্লাহর নামে বলছে, যেটা হয় আর কী!’
জাতীয় পার্টির এ সংসদ সদস্য বলেন, ‘তো আমি বললাম, কানে ধর হাত জোড় করে জনগণের কাছে মাফ চাও। মাফ চাইয়া তারে হসপিটালাইজ কইরা দাও। ওরে হসপিটালে দিল। পাবলিক যাতে মানতে না পারে, তার জন্য পুলিশ প্রটেকশন দিছে।’
‘ওখন সাংবাদিকরা এইটারে ঘুরাইতাছে’ মন্তব্য করে সেলিম ওসমান বলেন, ‘ঘটনাটা ঘটছে ৪টার সময়। পাবলিকের ডিমান্ড তো মাইনা নিতে হবে। এটা তো হিন্দু-মুসলমানের কোনো কথা না। এ রকম একটা কথা উঠছে। সত্য-মিথ্যা যাই হোক। তার পর আমি কমিটিরে বাতিল করে দিতে বলছি। টিএনওরে বলছি, কমিটি বাতিল করে দাও।’
সংসদ সদস্য আরো বলেন, ‘তারপর ওখানে (স্কুলে) একটা পুকুর ছিল। আমি পুকুরটারে ভরাট করতে মানা করছিলাম। পাবলিকের এইটাও একটা উত্তেজনা। হেডমাস্টার আর কমিটি মিলে পুকুরটারে ভরাট করছে। নারায়ণগঞ্জের ওই একটা স্কুলের মধ্যেই পুকুর আছে। আর কোথাও পুকুর নেই। পুকুরটাও ফিফটি পারসেন্ট ভইরা ফেলাইছে।’
‘পুলিশের কাছে তারে তুইলা দেওয়া হইছে, পাবলিকের ডিমান্ড অনুযায়ী। তারে কানবটনি দিছে আর হাত জোড় কইরা মাফ চাইছে। সে (প্রধান শিক্ষক) বলছেও, এমপি সাব যদি না যাইত, আমার মরণ ছাড়া কোনো পথ ছিল না। সেও স্বীকার করছে। যাই হোক, তখন তো একটা উত্তেজনা হইয়া গেছে। চান্দে সাঈদী দেখার মতো।’
সেলিম ওসমান বলেন, ‘এখানে আমার তো কোনো অলটারনেটিভ ছিল না। বোর্ডের আইনে বিচার আছে, ছাত্র মারছে তারে সাসপেন্ড কইরা দেওয়া যায়। তার বিচার হবে। কিন্তু এই কথার তো বোর্ডে কোনো আইন নাই। আল্লাহকে এবং মুসলমানকে গালি দেওয়া, এটার তো কোনো আইন নাই। কারণ, সত্য ছড়াক, মিথ্যা ছড়াক—আমার তো অলটারনেটিভ কিছু নাই।’