সন্ধ্যা নামতেই জ্বলে উঠল লাখো মোমবাতি
‘অন্ধকার থেকে মুক্ত কর একুশের আলো’ এ স্লোগানে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। আজ বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নড়াইল শহরের কুরিগ্রামের ছয় একরের কুরিরডোব মাঠে মোমবাতি জ্বালানো হয়।
একুশের আলো উদযাপন পর্ষদের আয়োজনে এক লাখ মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হলো ভাষা সৈনিকদের। এবারের এ আয়োজন নড়াইলের ভাষা সৈনিক রিজিয়া খাতুনের নামে উৎসর্গ করে আয়োজক কমিটি।
শহরের কুরিগ্রামের ৬ একরের কুরিরডোব মাঠে প্রায় তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবক মোমবাতি প্রজ্বালনের কাজ শুরু করে এবং ৬টা ২০ মিনিটে গোটা মাঠে জ্বলে উঠে লাখো মোমবাতি। মোমবাতি ধরানো হয়ে গেলে আবারও তারা মাঠ থেকে বের হয়ে যায়। এ সময় ৩৫ ফুট লম্বা, ১২ ফুট চওড়া ১০ ফুট উঁচু মঞ্চের ওপর বসে জেলঅ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের শিল্পীরা বিষাদমাখা চিরচেনা সেই- ‘আমার ভায়ের রক্ত রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি’ গানের মধ্য দিয়ে এক ঘণ্টাব্যাপী গণসংগীত পরিবেশন করেন। একে একে শিল্পীরা ১২টি গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন।
এতে নেতৃত্ব দেন জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীত শিল্পী মাহবুবুর রহমান লিটু।
এবার মাঠের মাঝখানে ছিল নতুনত্ব। মাঝখানে উঁচু ডিবিতে কাঠের শহীদ মিনার করে সেখানে মোমবাতি জ্বালানো হয়। তার চারপাশে হ্রদের মতো পানির ব্যবস্থা করা হয়। দেখতে মনে হতে পারে নয়নাভিরাম রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের রাতের দৃশ্য। এই হ্রদের পানিতে মাটির প্রদীপ, ককশিট ও কলাগাছের গুঁড়িতে মোমবাতি জ্বালিয়ে পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া পানির মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় জ্বালানো হয় লাইট। এ ছাড়া সারা মাঠে বাংলা বর্ণমালা, আল্পনা, বাংলার চিরায়ত বিভিন্ন লোকশিল্প তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী।
একুশের আলো উদ্যাপন পর্ষদের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মোহা. মেহেদী হাসান, পৌর মেয়র আনজুমান আরা, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু, একুশের আলোর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মলয় কুণ্ড প্রমুখ।
১৯৯৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ ও ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলের ৬ একরের বিশাল কুরিরডোব মাঠে সন্ধ্যায় ভাষা শহীদদের স্মরণে মোমবাতি জ্বালিয়ে ব্যতিক্রমী এ আয়োজনটি শুরু হয়। এ আয়োজন সফল করতে এক মাস আগে থেকে সাংস্কৃতিককর্মী, সেচ্ছাসেবক ও শ্রমিকরা কাজ শুরু করেন। নড়াইলসহ অন্যান্য জেলা থেকে আসা কমপক্ষে ২৫ হাজার মানুষ এই অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
অনুষ্ঠানে তিন শতাধিক পুলিশ ও সেচ্ছাসেবক মাঠের চারপাশের সার্বিক নিরাপত্তায় ছিলেন।
দর্শনার্থী ঈপ্সিতা বলেন, ‘এক লাখ মোমবাতি জ্বালিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন দেশের আর কোথাও দেখিনি। নড়াইলবাসীর এ আয়োজন সারা দেশকে আলোকিত করবে বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশের অন্য কোনো জেলায় এত বড় আয়োজন হয় বলে শুনিনি।’