টাকার বিনিময়ে আসামির পালানোর অভিযোগ, ২ পুলিশ সাময়িক বরখাস্ত
থানা থেকে রহস্যজনকভাবে হত্যা মামলার এক আসামি পালানোর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল বুধবার (৮ জানুয়ারি) সকালে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর থানায় ঘটে এ ঘটনা।
টাকার বিনিময়ে আসামি পালানোর নাটক সাজানো হয়েছে বলে অভিযোগ হত্যা মামলার বাদী ও তাঁর পরিবারের। এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শামীম আল মামুন ও কনস্টেবল মাহফুজ মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
মামলার বাদী নিহত আকাশ মাতুব্বরের বাবা ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা থানার দামদরদী গ্রামের শাহা আলম মাতুব্বর জানান, নগরকান্দা থানার গজারিয়া গ্রামের তরিকুল মাতব্বর, রাখালগাছী গ্রামের আল আমিন শেখ, দামদরদী গ্রামের রনি ফকির, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার কমলাপুর গ্রামের হৃদয় শেখসহ অজ্ঞাত আরও দু-তিনজন আমার ছেলে আকাশকে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করত এবং তারা আমার ছেলেকে বিভিন্ন অপরাধজনক কাজ করার প্রস্তাব দিত। বিষয়টি আমার ছেলে আমাদেরসহ বিভিন্ন লোকজনকে জানালে আসামিরা আমার ছেলের প্রতি ক্ষিপ্ত হয় এবং আমার ছেলেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে অকথ্য ভাষায় গালিগা করতে থাকে। এরপর আসামিরা আমার ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
২০২৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আকাশ মাতুব্বর (১৬) বাড়ি থেকে ভ্যান চালানোর উদ্দেশে বের হয়। পরে ওই দিন বিকেল ৪টার দিকে নগরকান্দার চাঁদহাট বাজার থেকে তাকে মুকসুদপুর উপজেলার দুয়ারীডাঙ্গা গ্রামের বক্কার মিয়ার মেহগনিবাগানে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে ইটবেঁধে মরদেহ পুকুরে কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে রাখে। পরের দিন ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর মেহগনি বাগানে আকাশের স্যান্ডেল এবং ভ্যানটি মুকসুদপুর উপজেলাধীন নারায়ণপুর খালিসাকান্দা গ্রামের মইনুদ্দিন মোল্লার বাড়ির পশ্চিম পাশে লেবু ও লিচু বাগানে পাওয়া যায়। ৮ ফেব্রুয়ারি নগরকান্দা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পুকুরের কচুরিপানা পরিষ্কার করার সময় বস্তাবন্দি মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে আকাশের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পালিয়ে যাওয়া আসামি হৃদয় শেখসহ পাঁচজনকে আসামি করে ৮ মার্চ হত্যা মামলা করেন আকাশের বাবা শাহা আলম মাতুব্বর।
গত মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে হৃদয়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আলাদা কক্ষ থাকলেও গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ছুটিতে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) শীতল চন্দ্র পালের রুমে নেওয়া হয় হৃদয়কে। পুলিশের দাবি জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হাতকড়া খুলে কৌশলে পালিয়ে যায় আসামি হৃদয় শেখ। বিষয়টি প্রথমে গোপন রাখলেও রাতে ঘটনাটি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান থানার ওসি মোস্তফা কামাল।
হত্যা মামলার আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি জানাজানি হলে সৃষ্টি হয় চাঞ্চল্যের। আকাশের পরিবারের দাবি টাকার বিনিময়ে আসামি হৃদয়কে পালাতে সহায়তা করেছে পুলিশ।
মুকসুদপুর থানার ওসি মোস্তফা কামাল বলেন, থানায় যে ঘটনা ঘটেছে এটা একটা দুর্ঘটনা। সে সময়ে যে পুলিশ সদস্য ছিল তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং তদন্ত হচ্ছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শামীম আল মামুনসহ দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ।
মুকসুদপুর সার্কেলের এএসপি আব্দুল বাসেত জানান, এ বিষয়ে তিন দিনের ভিতর একটি প্রতিবেদন দেওয়ার দায়িত্ব আমার উপর অর্পণ হয়েছে। বিষয়টি আমি তদন্ত করছি।
পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান মোবাইল ফোনে জানান, আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া আসামীকে ধরতে অভিযান চলমান রয়েছে।