সচিবালয়ের সামনে তিন দাবিতে অনশনে জবি শিক্ষার্থীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরসহ তিন দাবিতে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। প্রায় ৩২ ঘণ্টা অনশনে থাকা অসুস্থ শিক্ষার্থীরাও সেখানে এসেছেন। দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীরা এবার সচিবালয়ের সামনে আমরণ অনশনে বসার ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও জবি শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে সচিবালয়ের পথে রওনা হন শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৫টার দিকে তারা সচিবালয়ের সামনে পৌঁছান। এসময় শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ে নানা স্লোগান দেন। তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা সচিবালয়ের সামনে অবস্থানের ঘোষণা দেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘বিপ্লবে বলীয়ান, নির্ভীক জবিয়ান’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘লজ্জা লজ্জা, ইউজিসি ইউজিসি’, ‘অনশন চলছে চলবে, ‘কবে দিবা ক্যাম্পাস’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘প্রশাসন কী করে, এমন নানা স্লোগান দেন।
সচিবালয়ের সামনে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরা জানান, ‘আমরা একঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিলাম অঙ্গীকারের লিখিত চিঠি নিয়ে আসতে। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে কোনো চিঠি আসেনি। তারা আমাদের কথায় গুরুত্ব দেননি। ফলে পূর্বঘোষিত আলটিমেটাম অনুযায়ী আমরা সচিবালয়মুখী হয়েছি। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ছি না।
অনশনরত শিক্ষার্থী রায়হান রাব্বি বলেন, ‘আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা রাজপথ ছাড়ব না। আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে এমন লিখিত অঙ্গীকার দিতে হবে। তারপরে আমরা অনশন ভাঙবো। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি পূরণে করণীয় ঠিক করতে সভা ডেকেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী বুধবার (১৫ জানুয়ারি) এ সভা হবে। সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আহমেদ শিবলীর সই করা নোটিশে এ সভা আহ্বান করা হয়।
গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জবি ক্যাম্পাসে গণঅনশন কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। রাত ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে ১৫ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের জবি মেডিকেল সেন্টারসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কর্মসূচি চালিয়ে নিতে রাত ২টার দিকে গণঅনশনে বসেন আরও অর্ধশতাধিক ছাত্রী। তারা সকাল পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন।
যে তিন দাবি নিয়ে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা
১. সেনাবাহিনীর কাছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তরের চুক্তি অনতিবিলম্বে সই করতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষ বৈঠকের মাধ্যমে তা শেষ করতে হবে এবং ভিজ্যুয়ালি সবার সামনে তা উপস্থাপন করতে হবে। শিক্ষার্থীরা অনশনে থাকা অবস্থায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকার নিয়ে তা প্রকাশ করতে হবে। কয়েক মাস সময় নেওয়ার নাম করে কোনো প্রকার দীর্ঘসূত্রতার বন্দোবস্ত করা চলবে না।
২. পুরান ঢাকার বাণী ভবন ও ড. হাবিবুর রহমান হলের স্টিল বেইজড ভবনের কাজ দ্রুত শুরু ও শেষ করতে হবে।
৩. যতদিন পর্যন্ত আবাসন ব্যবস্থা না হয়, ততদিন ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ভাতা নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলেই আমাদের এই কার্যক্রম আরও সহজ ও ত্বরান্বিত হয়েছে। আমাদের কাজ অনেকটা এগিয়ে গেছে। বৈঠকে প্রকল্পের অবস্থাও বিশ্লেষণ করা হবে। এরপর একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সভায় আমাদের দাবির অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।