পদ ছেড়ে দিয়ে আতিউর রহমান ‘তৃপ্ত’
দেশের রিজার্ভের অর্থ কেলেঙ্কারির জেরে আজ মঙ্গলবারই পদত্যাগ করেছেন ড. আতিউর রহমান। এর তিন ঘণ্টা পর সংবাদ সম্মেলনে জানালেন নিজের সন্তুষ্টির কথা, ‘মনের দিক থেকে আমি আজ তৃপ্ত মানুষ।’
আজ মঙ্গলবার গুলশানে গভর্নর হাউসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ড. আতিউর রহমান তাঁর সময়কালের সাফল্যের দিকগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে এমন ব্যবস্থা নিলাম যেন নতুন উদাহরণ সৃষ্টি হয়। আমি পরাজিত সৈনিক নই।’
এর আগে বেলা পৌনে ১২টার দিকে ড. আতিউর প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে আতিউর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংককে আমি আমার সন্তানের মতো দেখেছি। ২৮ বিলিয়ন ডলার করেছি তিলে তিলে। সেটা হারিয়ে যাবে অবলীলায়, তা হতে পারে না।’
রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনার কথা আবারও উল্লেখ করে আতিউর রহমান বলেন, ‘ওই ঘটনার ইতিবাচক দিক আছে। এটা সাইবার অ্যাটাক। এখনো পুরোপুরি জানি না। এখনো তদন্ত হচ্ছে। এটা হাইটেক আ্যাটাক। টেররিস্ট অ্যাটাকের মতো।’
আতিউর রহমান আরো বলেন, ‘এটিএমের ওপর অ্যাটাকের সময় এটা (রিজার্ভ অর্থ চুরি) আসে। এখানে অস্পষ্টতা ছিল। যে কয়টা টাকা আমার আছে , সেখানে যেন হাত না পড়ে। ফেরত আনতে গিয়ে আমাদের একটু সময় লেগেছে। বিষয়টি আমি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দাকে (এনএসমআই) জানিয়েছি। তিনি আরো বলেন, ‘যখন বুঝতে পেরেছি টাকাগুলো এসেছে, আবারো ফিরে আসবে। তখন আমরা অর্থমন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।’
আতিউর রহমান বলেন, ‘সেন্ট্রাল ব্যাংক অন্য ব্যাংকের মতো না। এর নিজস্ব প্রটোকল আছে। ভুল ভ্রান্তি থাকতেই পারে।’
আতিউর রহমান আরো বলেন, ‘আমি কোথা থেকে কোথায় এসেছি তা সবাই জানেন। এ দেশের মানুষের প্রতি আমার আনুগত্য দিয়ে আমি ব্যাংক পরিচালনা করেছি।’
আতিউর রহমান আরো বলেন, ‘বেসরকারি ব্যাংকগুলো আমাকে অনেক সমর্থন দিয়েছে। আমার কথা শুনেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকে সমস্যা আছে। সেখানে আমি শৃঙ্খলা এনেছি। আশা করব সরকার সেদিকে নজর দিবে।’
আতিউর রহমান বলেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের চেতনায় বিশ্বাসী । আমি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে কাজ করেছি। তিনি যখন আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন, তাঁর হাতেই আমি পদত্যাগপত্র দিয়েছি। তাঁর চোখ দিয়ে পানি পড়েছে। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে এমন সংস্কৃতি নেই।’
আতিউর আরো বলেন, ‘আমি একজন ভূমিপুত্র। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। আমি তাঁর নির্দেশনায় ব্যাংকিং খাতকে স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে নিয়ে এসেছিলাম।’
বিদেশে থাকার প্রসঙ্গ টেনে আতিউর রহমান বলেন, ‘মাত্র দুইদিন বাইরে ছিলাম। বাকি দুইদিন ছুটিতে ছিলাম। আমি অনলাইনে কাজ করেছি। এ নিয়ে এত বড় ঘটনা করার কারণ ছিল না।
আতিউর বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ । আশা করব আগামী দিনের অর্থনীতিকে উপরে নিতে সাহায্য করবেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের বৃত্তির মাধ্যমে চরের ছেলেমেয়েরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারছে।’
শিক্ষকতা পেশায় ফিরে যাবেন উল্লেখ করে আতিউর বলেন, ‘আমি শিক্ষক হিসেবে আবার কাজ করব। শিক্ষার্থীদের জন্য বিরাট অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার নিতে পারব। শেষ পর্যন্ত আমার পরিচয় শিক্ষক।’