রাবির আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে ‘ধাক্কাধাক্কি’
ঢাকায় অতিথি ভবন ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’-এর ডাকা সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়েছে।
আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরি ভবনে এই সংগঠনটির বর্তমান প্রশাসনবিরোধী ও প্রশাসনপন্থীদের মধ্যে তীব্র বাগবিতণ্ডা প্রায় এক ঘণ্টা (বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত) চলার পর এই সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়। এ সময় শিক্ষকদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে।
সংবাদ সম্মেলন আহ্বানকারী শিক্ষক বলছেন, ঢাকায় রাবির অতিথি ভবন ক্রয় সংক্রান্ত ব্যাপারে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়ে পরিষ্কার হওয়ার জন্য এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনপন্থীরা এটা পণ্ড করে দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের বিরোধীরা বলছেন, তাঁরা প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের নির্বাচিত সদস্য, কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে কী উপস্থাপন করা হবে তা তাঁদের না জানিয়ে এবং সংগঠনে পাস না করে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। তাঁদের নামে তথ্য যাচ্ছে কিন্তু তাঁদের আগে থেকে না জানানোর কারণে বিরোধিতা করেন তাঁরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আজ বেলা ৩টায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করার সময় এর বিরোধিতা করেন স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফয়জার আহমেদ। তিনি জানতে চান, এখানে কী পাঠ করা হবে। নিয়ম অনুযায়ী সাধারণ সদস্যরা না জানলেও ২০ জন স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য এটা জানার অধিকার রাখেন। কিন্তু তিনি তা জানেন না। তাই তিনি সংবাদ সম্মেলন বর্জন করে চলে যান।
এ সময় উপস্থিত স্টিয়ারিং কমিটির আরো কয়েকজন সদস্য দাবি করেন, তাঁরাও সংবাদ সম্মেলনের বিষয় সম্পর্কে আগে থেকে অবহিত নন। এমন সময় সংবাদ সম্মেলন আহ্বানকারী ও বিরোধিতাকারীদের মধ্যে উত্তপ্ত বাগবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এটা প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে। এ রকম পরিস্থিতিতে এই সংবাদ সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি।
সংবাদ সম্মেলন ডাকা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক রকীব আহমদ বলেন, ‘বর্তমান প্রশাসনের মেয়াদ শেষ। আর মাত্র ২০ দিন আছে। ভবন ক্রয় সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এরই মধ্যে সংবাদপত্রে এসেছে। আমরা শুধু এই বিষয়টা জানতে চেয়েছি। এজন্য প্রশাসনের কাছে বেশ কয়েকবার গিয়েছি, কিন্তু তারা পরিষ্কার করতে পারেনি। এই বিষয়টি আমরা আজকে সংবাদ সম্মেলনে পারিষ্কার করতে চেয়েছি। কিন্তু প্রশাসন পক্ষের শিক্ষকরা এটা পণ্ড করে দিয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনের বিরোধিতাকারী ও স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘দলে দুটি সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে উপ-উপাচার্যের কাছে যাব, গিয়ে তথ্যগুলো নেব। এরপর সেগুলো যাচাই-বাছাই করব। প্রয়োজনে আইনজীবী নিয়োগ দেব, কারণ সব আইন তো আমরা বুঝি না। এরপর যদি সেখানে দুর্নীতি প্রমাণিত হয়, তখন দুর্নীতিকারীদের বিরুদ্ধে দলের অবস্থান হবে।’
পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. সুলতান-উল-ইসলাম আরো বলেন, ‘উপ-উপাচার্য আহ্বান জানিয়েছেন, আসেন কাগজপত্র দেখেন। কিন্তু তাঁরা সে কাগজপত্র না দেখে হঠাৎ করে আজকে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন।’
মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলনে যা বলা হবে, তা আমাদের কাছে তুলে ধরা হয়নি। অথচ আমি স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য, এটা দেখার, জানার অধিকার রাখি। তাঁরা আমাদের কাছে প্রকাশই করছে না। আমরা বলেছি, আমাদের কাছে পেশ করেন, পেশ করে সংবাদ সম্মেলনের করেন। কিন্তু বিষয়টা পরিষ্কার না হয়েই তাঁরা সংবাদ সম্মেলন করার চেষ্টা করেছেন। এর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের কাগজপত্র নেই যে অন্যায় হয়েছে। আমি দলের সদস্য। আমি জিজ্ঞাসা করব না? আমার নামে বক্তব্য চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘যাঁরা সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন তাঁরা এর আগে উপাচার্যের সঙ্গে দুবার দেখা করেছিলেন। ওই সময় উপাচার্য তাঁদের অতিথি ভবন ক্রয়ের সব কাগজপত্র দেখিয়েছেন। তারপরও যদি কোনো বিষয় জানার থাকে পরে উপাচার্যের কাছে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু তাঁরা না গিয়ে আজ সংবাদ সম্মেলন ডাকেন।’