জাবির ৪৩ শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার, হল ছাড়ার নির্দেশ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সে সঙ্গে আজ রোববার সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাত ৯টায় অনুষ্ঠিত জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. আমির হোসেন জানিয়েছেন।
এ ছাড়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছে আশুলিয়া থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসাইনও রয়েছেন।
আন্দোলনের সময় নাজমুল অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়। পরে রাত ১টার দিকে তাঁকে প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে জোর করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখান থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে পুলিশের পাহারায় তাঁর চিকিৎসা চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তৌহিদ হাসান শুভ্র বলেন, ‘নাজমুলের অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাঁকে জোর করে এনাম মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর মেহেদী ইকবাল বলেন, ‘চিকিৎসক তাঁকে রেফার করেছেন, তাই সেখানে নেওয়া হয়েছে।’
সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ও ক্যাম্পাসে তাঁদের জানাজা না করার প্রতিবাদে শনিবার দুপুর পৌনে ১২টা থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা।
বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ লাঠিপেটা, গুলি-টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এর পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন।
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপাচার্যের বাসভবনের জানালার কাচ, ফুলের টব ও সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করেন তাঁরা। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে সেখানে থাকা শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তি হয়।
শিক্ষকদের দাবি, এ সময় দুই থেকে তিনজন শিক্ষক আহত হন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন আরো ছয় থেকে সাতজন শিক্ষক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত পৌনে ৯টার দিকে বাসভবন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশ গিয়ে বাসভবনের ফটক বন্ধ করে দিয়ে ভেতরে থাকা শিক্ষার্থীদের অবরুদ্ধ করে রাখে। ওই সময় উপাচার্যের বাসভবনেই জরুরি সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়। সিন্ডিকেটে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাত ১২টায় সিন্ডিকেট সভা শেষ হলে আগে থেকেই অবরুদ্ধ করে রাখা শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাভার সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আশরাফুল আজিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীদের কোথায় নেওয়া হয়েছে—জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহসিনুল কাদির এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আছে বিভিন্ন জায়গায়। এ মুহূর্তে আমি কিছু বলতে পারছি না।’