হোটেল ও বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, আবাসিক সংকটে পাবিপ্রবির ভর্তিচ্ছুরা
আবাসিক সংকটে পড়েছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রায় ৪১ হাজার ভর্তিচ্ছু ও তাঁদের অভিভাবকরা।
শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস ছাড়াও শহরের ১৪টি কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এবার ৯১০টি আসনের বিপরীতে আবেদনকারীর সংখ্যা ৪১ হাজার ৮১ জন। প্রতিটি আসনের জন্য লড়ছে ৪৫ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া প্রতি শিক্ষার্থীর সঙ্গে এক দুজন করে অভিভাবক থাকলেও শুক্রবার পাবনায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটবে।
এদিকে, ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শহরের হোটেল ব্যবসায়ী ও বাস মালিকরা রমরমা ব্যবসা শুরু করেছেন। হোটের ভাড়া তিন থেকে চারগুণ এবং বাস ভাড়া দ্বিগুণ করা হয়েছে। এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পাবনা জেলা শাখা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পাবনা জেলায় মোট ২১টি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে পাবনা শহরে ১০ থেকে ১১টি। যার শয্যা সংখ্যা প্রায় এক হাজার। এ ছাড়া আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে আরো প্রায় ১০ হাজার পরীক্ষার্থী আবাসন ব্যবস্থা করে নিয়েছে। বাকি প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীসহ ৯০ হাজার মানুষকে একদিনের জন্য হলেও কাটাতে হবে বাসস্ট্যান্ড অথবা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আশপাশের খোলা আকাশের নিচে।
এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে অস্থায়ী শামিয়ানা টানিয়ে অনেকে বিশ্রামের ব্যবস্থা করেছেন।
পাবনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল কাদের বলেন, তিনি নিজ উদ্যোগে তাঁর সরকারি অফিসের নিচে ১২ জনের থাকার ব্যবস্থা করেছেন। পাবনা চেম্বারের পরিচালক এ এইচ এম রেজাউন জুয়েল জানান, ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাঁর বাসায় বেশ কয়েকজনের থাকার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
সূত্রে জানা যায়, পাবনার হোটেল পার্কে প্রতিরুম (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয়) ৫০০ টাকা এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম (এসি) এক হাজার সিট ভাড়া হলেও সেই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে দেড় থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। একই অবস্থা শাপলা হোটেল, ছায়ানীড় হোটেল, ইডেন হোটেল, হোটেল ড্রিম প্যালেস, হোটেল মুন, হোটেল রোহান, প্রাইস, হোটেল ফয়সল ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল শিলটন, হোটেল বলাকা, হোটেল ইভিনিং মর্নিংসহ প্রায় সব হোটেলে।
এ ছাড়া পাবনা থেকে ঢাকায় বাসের ভাড়া নন এসি ৩০০ টাকা হলেও নেওয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।
ঢাকার উত্তরার সাহিদা আখতার নামের এক গৃহিণী তাঁর মেয়েকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে পাবনায় এসেছেন। কোথাও কোনো সিট না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। পড়ে স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাসায় তাঁকেসহ ১০ জনকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন চৌধুরী বলেন, এত লোকের আবাসন ব্যবস্থা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের করা সম্ভব না। সবাই নিজ উদ্যোগে থাকার ব্যবস্থা করেন। তবে অনেকে দিনে এসে দিনেই চলে যায়।
ক্যাব পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ জেবুনেচ্ছা ববিন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম মাহবুব আলম বলেন, পাবনার প্রতিটি হোটেলে তিন-চারগুণ বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বাসের ভাড়াও প্রায় দ্বিগুণ আদায় করা হচ্ছে। যা ভোক্তা অধিকারের পরিপন্থী।
এদিকে, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এটিএম মাসুম উদ দৌলা বলেন,এ ধরনের একাধিক অভিযোগ তাদের কাছে এসেছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। সম্মতি দিলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।