’৭২-এর সংবিধানের মূলনীতি বাস্তবায়নের আহ্বান
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ১৯৭২ সালের সংবিধানের চার মূলনীতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান।
গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অর্থনীতি বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে ‘সুবর্ণজয়ন্তী বক্তা’র বক্তব্যে রেহমান সোবহান এ আহ্বান জানান।
চবি অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে গতকাল সকালে উৎসবের উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে ’৭২-এর সংবিধানের চার মূলনীতি তথা ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সুদৃঢ় জাতীয়তাবাদ আর সামাজিক সমতা নিশ্চিত করতে হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করবে, গড়ে তুলবে সুদৃঢ় সামাজিক সমৃদ্ধি। দেশের অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় ঝরেপড়ার হার কমাতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের অধিকাংশ ভালো স্কুল ঢাকা-চট্টগ্রামে অবস্থিত। এই প্রবণতা দূর করে শিক্ষাকে সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতির নামে কিছু শিক্ষার্থী ব্যবসায়ী হয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করেন রেহমান সোবহান। এটাকে শিক্ষার উচ্চমান অর্জনে বাধা বলে উল্লেখ করে এই বাধা দূর করতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
ড. ইউনূস প্রসঙ্গে স্মৃতিকাতর অতিথিরা
অর্থনীতি বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না এই বিভাগেরই সাবেক শিক্ষক শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি অনুপস্থিত থাকলেও তাঁর কথা স্মরণ করে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন আগত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এসময় তাঁরা ড. ইউনূসের কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে তাঁর অবদান স্মরণ করেন।
সুবর্ণজয়ন্তী বক্তা অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘চবি অর্থনীতি বিভাগ নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূসের মতো মহান অর্থনীতিবিদকে জন্ম দিতে পেরেছে, সে বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী বক্তা হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’ তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায়ে কাজ করেন। যুদ্ধ শেষে তিনি বিদেশের জীবন ছেড়ে দেশের ভেঙে পড়া অর্থনীতি উদ্ধারে গ্রামীণ ব্যাংক গড়ে তোলেন।’
অনুষ্ঠানে খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ইউজিসির অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের প্রথম নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একটা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে এমন অবস্থায় নিয়ে এসেছে যে সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান থেকে তিনি (ইউনূস) নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন, যেন তাঁকে বিব্রত হতে না হয়। মইনুল ইসলাম আরো বলেন, ‘আমাদের দুঃখ, জাতি হিসেবে এই প্রচণ্ড রকমের মেধাবী ব্যক্তি, যাঁকে দিয়ে সারা বিশ্ব বাংলাদেশকে চেনে, তাঁকে আমরা আসলে অসম্মান করছি। আমি এ অসম্মানের পর্বের শেষ চাই।’
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন চবি অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। তিনি উপস্থিত শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসে আমি যদি মেয়র হতে পারি, তবে আপনিও পারবেন আপনার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে।’
যে চারটি বিভাগ নিয়ে ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা, অর্থনীতি বিভাগ তার অন্যতম। সুবর্ণজয়ন্তীতে অংশ নেন বিভাগটির তিন হাজার সাবেক শিক্ষার্থী। গতকাল সারা দিনই এই শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর ছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। দীর্ঘদিন পর পুরোনো বন্ধুদের কাছে পেয়ে স্মৃতিচারণ আর ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন সাব্কে শিক্ষার্থীরা।
উৎসবে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আলী আশরাফ, অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী, অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আযাদ, অধ্যাপক ড. নিতাই চন্দ্র নাথ, অধ্যাপক জ্যোতি প্রকাশ দত্ত, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী।