‘শ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্ধারণ করাটা বিভ্রান্তিকর’
একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও প্রাবন্ধিক সনৎকুমার সাহা বলেন, ‘শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিষয়টা নির্ধারণ করা আমার কাছে বিভ্রান্তিকর। শ্রেষ্ঠ হিসেবে কোনো জায়গাতে আমাদের ভাবনাকে নিবদ্ধ করতে চাওয়াটাও গোলামালের ব্যাপার। বাঙালি জাতি একদিনের নয়। এর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নজন অবদান রেখেছেন। তাঁরা সবাই সম্মানীয় ও গ্রহণযোগ্য। এখানে বিদ্যাসাগরের সঙ্গে রামমোহনের বা অন্য কারো সঙ্গে কারোর তুলনা অবান্তর।’
আজ সোমবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বাংলা ভাষার লেখক-পাঠক-সম্পাদকদের বৈশ্বিক সম্মেলন চিহ্নমেলা-বিশ্ববাঙলায় ‘বাঙালির চোখে শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ শীর্ষক আড্ডায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘পাঁচজন থেকে যদি দুজনে আসি তাহলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উল্লেখ করতে হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালিকে বিশ্বজনীনতার দিকে নিয়ে গেছেন। বাঙালির সমাজে নানা সমস্যার সমাধানে আজও আমরা রবীন্দ্রনাথকে খুঁজে পাই। আর বঙ্গবন্ধু বাঙালিকে সচেতন করেছেন। মুক্তিসংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্রের স্থপতি। অন্যরাও নিজের সময়ে অনেক অবদান রেখেছেন।’
অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘বাঙালিকে অধিকারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ অবদান রেখেছেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বাঙালির রাজনৈতিক মুক্তিতে কাজ করেছেন। বাঙালি জাতির চলার পথে বিভিন্ন বাঁক-বদল হয়েছে। আর বাঁকে বাঁকে বিভিন্নজন অবদান রেখেছেন।’
এ সময় অন্য বক্তারা বলেন, বাঙালি জাতি নদীর স্রোতের মতো প্রবাহমান। এর প্রবাহে বিভিন্ন সময় বিভিন্নজন অবদান রেখেছেন। নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাঁরা সবাই শ্রেষ্ঠ। এই প্রবাহে কোনো বিন্দুকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে নির্দিষ্ট করলে সেখানে জাতির প্রবাহ থেমে যায়। তাই স্থির বিন্দুতে থেমে যাওয়া অনুচিত। বাঙালিদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের কারো সঙ্গে কারো তুলনা চলে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ কলাভবন চত্বরে চিহ্নমেলার প্রথম দিন বেলা ১১টায় আয়োজিত ‘বাঙালির চোখে শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ শীর্ষক আড্ডায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, পশ্চিমবঙ্গের লেখক ইমানুল হক, কবি জুলফিকার মতিন, রাজশাহী কবিকুঞ্জের সভাপতি রুহুল আমিন প্রামাণিক। সঞ্চালনা করেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।
এর আগে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ কলাভবনের সামনে ‘চিহ্ন’র উদ্যোগে আয়োজিত দুদিনব্যাপী ‘চিহ্নমেলা-বিশ্ববাঙলা’র উদ্বোধন করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, লেখক সেলিনা হোসেন, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা, চিহ্নপ্রধান ড. শহীদ ইকবাল, চিহ্নর নির্বাহী রহমান রাজু প্রমুখ। এরপর সেখান থেকে লেখক-পাঠক ও সম্পাদকদের নিয়ে একটি শোভাযাত্রা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সেখানে গিয়ে শেষ হয়।
দুদিনব্যাপী এ মেলা চলবে সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। মেলায় দেশ-বিদেশের ১১০টি ছোটকাগজের স্টল রয়েছে। মেলায় সাহিত্যের সৃজনশীল ও মননশীল শ্রেণিতে দুজন সাহিত্যিককে চিহ্ন পুরস্কার ও ছোটকাগজ সম্মাননা-২০১৬ দেওয়া হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের সাতটি ছোটকাগজকে চিহ্ন ছোটকাগজ সম্মাননা দেওয়া হবে।