২৬ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ৪টি বাস
পাবনার তথা উত্তরবঙ্গের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। লেখাপড়ার মান থেকে শুরু করে সবকিছুতেই এগিয়ে এখানকার শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন সংকট মোকাবিলা করেও তাঁরা এগিয়ে চলেছেন।
তবে বর্তমানে কলেজে আসা-যাওয়ার জন্য চরম পরিবহন সংকটে ভুগছেন শিক্ষার্থীরা। কলেজের ২৬ হাজার ছাত্রছাত্রীর জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৫০ জন বসার উপযোগী মাত্র চারটি বাস। ফলে আক্ষরিক অর্থেই গাদাগাদি ও চাপাচাপি করে কলেজে আসা-যাওয়া করছেন শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে ছাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বেশি।
কলেজের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই চারটি বাস মোট ছয়টি রুটে চলাচল করে। এর মধ্যে চারটি বাস ডাবল রুটে চলে। আর দুটি বাস শিফটিং করে ডাবল রুটে চলে। এসব বাস পাবনা জেলার আটঘরিয়া, ঈশ্বরদী, চাটমোহর, সাঁথিয়া, আতাইকুলা, কাশিনাথপুর, ভাঙ্গুড়া, সুজানগর, সাতবাড়িয়া ইত্যাদি জায়গা থেকে শিক্ষার্থী আনা-নেওয়া করে থাকে।
এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতেই বেরিয়ে এলো দুর্ভোগের করা। তাঁরা জানান, ভর্তির সময় বাসের জন্য সেশন ফি বাবদ অতিরিক্ত ৪০০ টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু বাসের পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা পান না বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। প্রতিটি বাসের ধারণক্ষমতা ৫০ জন হলেও একেকটিতে ২০০ ছাত্রছাত্রী গাদাগাদি করে কষ্ট করে যাতায়াত করেন। বিশেষ করে গরমের সময়টুকুতে কষ্টের সীমা থাকে না।
কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী মিনি খাতুন, মালা সরকার ও সুমি খাতুন এনটিভি অনলাইনকে জানান, বেশির ভাগ দিনই সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। ভিড়ে ছেলেদের সঙ্গে ঠেলাঠেলি করে বাসে উঠতে হয়। একরকম বাধ্য হয়েই এভাবে যাতায়াত করতে হয় আর প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। অনেক সময় ভিড়ের কারণে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন বলেও জানান তাঁরা।
কথা হয় কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মিজান তানজিল, তানভির রহমান, আশিক ইকবাল ও সোহেল রানার সঙ্গে। তাঁরা বলেন, কলেজের চারটি মাত্র বাস। আর সেগুলোও অতি পুরোনো এবং খুবই দুর্বল। বাসের গতি একেবারেই কম। এ জন্য প্রায়ই সঠিক সময়ে কলেজে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। ফলে ক্লাস মিস হয়।
প্রতিটি বাসই ডাবল রুটে চালু করার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। সে সঙ্গে পরিবহন পুলে বাসের সংখ্যা বাড়ানোর দাবিও জানান তাঁরা।
এ ব্যাপারে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের পরিবহন আহ্বায়ক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক পরিবহন সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য কলেজে যে চারটি বাস আছে, সেগুলোর প্রতিটি ডাবল রুটে চালু করা সম্ভব নয়। কারণ, বাসগুলো অতি পুরোনো, তাই খুব দুর্বল হয়ে গেছে। যদি আমরা প্রতিটি বাস ডাবল রুটে চালু করি, তাহলে এখন যদিও বা কোনোরকম চলছে, কিছুদিন পর তা-ও চলবে না। তা ছাড়া কলেজে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রতিবছর বেড়েই চলেছে, অথচ বাসের সংখ্যা বাড়ছে না। ৫০ সিটের বাসে ২৫০ ছাত্রছাত্রী চড়ার ফলে বাসের ওপর অত্যধিক চাপ পড়ছে, এতে প্রতিদিনই বাস মেরামত করতে হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সরকার কখনোই নিজ খরচে সরকারি কলেজে বাস কিনে দেয় না বা বাসের যাতায়াত খরচ বহন করে না। প্রতিটি সরকারি কলেজ তার নিজের ফান্ড থেকে বাসের যাবতীয় খরচ বহন করা হয়ে থাকে। তবে সরকারের অনুমোদন ছাড়া আমরা নিজ উদ্যোগে বাস কিনতে পারি না। আমাদের কলেজ ফান্ডের বাস কেনার সামর্থ্য আছে। অনুদানের জন্যও সরকারের কাছে আবেদন করেছি। সরকার বাস ক্রয়ের একটা শর্তযুক্ত অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু সেই শর্তগুলো প্রতিপালন করা কলেজের জন্য খুব কঠিন। শর্ত শিথিলের জন্য দেনদরবার চলছে, শর্তগুলো সহজসাধ্য করে দিলে কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে বাস ক্রয় করতে সক্ষম হবে। তাহলে পরিবহন সংকট অনেকটাই সমাধান হবে।’
কলেজ কর্তৃপক্ষ পরিবহন সংকট সমাধানের জন্য চেষ্টা করছে বলে জানান অধ্যক্ষ ড. হুমায়ুন কবির মজুমদার। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।