উদয়ন স্কুলে শিক্ষকের পক্ষে-বিপক্ষে শিক্ষার্থীদের অবস্থান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীকে প্রহারের ঘটনায় অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষকের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। একটি অংশ শিক্ষকের পক্ষে অবস্থান নিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ করেছে। আর আরেকটি অংশ ছাত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিদ্যালয়ের ভেতরে অবস্থান নিয়েছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, ছাত্ররা স্বেচ্ছায় রাস্তায় নামেনি, তাদের জোর করে নামিয়েছেন শিক্ষকরা।
আজ বুধবার সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ফুলার রোডে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা শিক্ষকের পক্ষে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেয়।
এদিকে শিক্ষকদের ইশারায় ছাত্রদের রাস্তায় নামানো হয় এবং পরে তাদের ইশারায় স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। বিদ্যালয়ের সপ্তম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের পক্ষে এবং অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ছাত্রের পক্ষে অবস্থান নেয়।
এই ইস্যুতে অভিভাবকদের মধ্যেও দুটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে। একটি পক্ষ চাচ্ছে বিষয়টি যেহেতু আদালতে গেছে, ওখানেই এটার সমাধান হবে। অন্যদিকে আরেক পক্ষ বলছে, উনি গণিতের ভালো শিক্ষক। পরীক্ষার আগে ওনাকে অব্যাহতি দিলে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে। তাঁরা ওই শিক্ষককে ক্লাসরুমে ফেরত চান।
অভিভাবক এ কে এম শহীদুল আলম বলেন, ‘এই বিষয় নিয়ে হাইকোর্ট বলেছেন তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে। বিষয়টা এই অবস্থা থাকার পরে আজকে এসে দেখি বাচ্চারা রাস্তায় অবস্থান করছে। এটা তো সিস্টেম না। বাচ্চারা কেন আজকে দলাদলির মধ্যে আসবে। কিছু বাচ্চা ভেতরে থাকবে আর কিছু বাচ্চা বাইরে অবস্থান নেবে এই অবস্থায় আমি একজন অভিভাবক হিসেবে শঙ্কিত। জাওশেদ স্যার ভালো করেছেন না মন্দ করেছেন সেটা কোর্টের ব্যাপার। কোর্ট সিদ্ধান্ত দেবেন উনি স্কুলে থাকবেন কি থাকবেন না। উনি ভালো শিক্ষক, আমরা ওনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু কথা হচ্ছে যে উনি যে ঘটনাটা করেছেন এটা কিন্তু মেনে নেওয়া যাবে না। শিক্ষার্থীরা বলছে, তারা জাওশেদ স্যারকে চাই। কিন্তু এটা একটা অংশ, সব ছাত্ররা না।’ কেন তারা এমন বলছে তাদের কি কেউ জোর করে নামিয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শহীদুল আলম আরো বলেন, ‘কোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছেন। তার জবাব এক মাসের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে। জাওশেদ স্যার একটা ছেলেকে মেরেছেন। ওই ছেলে ওনাকে কী নাকি বলেছে। যেটা আপত্তিকর। কিন্তু ও তো একটা বাচ্চা। সে শিশু, এখানে তার অপরাধ ধরা যায় না। এটা ভুল। বিষয়টা ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে। আজ কোর্টই তদন্ত করে ফয়সালা দেবেন। সামনে তাদের পরীক্ষা কিন্তু কেন ক্লাস বাদ দিয়ে বাচ্চাদের রাস্তায় নামানো হলো?’
অন্যদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিভাবক বলেন, ‘স্কুলের বেতন ৬০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা করা হয়েছে। কথায় কথায় টিসি দিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এমনকি কোনো প্রকার সতর্কতা ছাড়াই ভর্তি বাতিল করা হয়।’ এসব বিষয় নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেও কোনো প্রকার লাভ হয়নি বলে জানান তিনি।
আরেক অভিভাবক বলেন, ‘উনি খুব ভালো শিক্ষক। আমরা ওনাকে চাই।’
এদিকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এ এম আমজাদ স্কুল পরিদর্শনে আসেন। তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষক একজন ছাত্রকে প্রহার করছিল বলে যে মিডিয়াতে আসছে, সেটার বিপক্ষে যারা তারা আজকে দাঁড়িয়েছে। তারা বলছে, উনি ভালো শিক্ষক, আমরা আমাদের শিক্ষককে ফেরত চাই। তাদের দাবি হচ্ছে তারা তাদের শিক্ষককে ফেরত চায়।’
তাদের জোর করে রাস্তায় নামানো হয়েছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে এ এম আমজাদ বলেন, ‘এটা আমি জানি না। আমি শুনে পুলিশকে খবর দিই। যাতে নিরাপত্তার কোনো সমস্যা না হয়। তাদের কীভাবে ভেতরে ঢোকানো যায় সেই প্রক্রিয়া করেছি।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক জাওশেদ আলম বলেন, ‘আমাকে ঘটনার পরে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। আজকে শিক্ষার্থীরা আমার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।’
তবে এ বিষয়ে জানতে স্কুলের অধ্যক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ এপ্রিল বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী জামিউল ইসলাম নাদিমকে প্রহার করেন শিক্ষক জাওশেদ আলম। পরে ২০ এপ্রিল বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. সেলিমের হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ তাঁকে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত এই ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ৩০ দিনের মধ্যে অধ্যক্ষকে জানানোর নির্দেশ দেন।