রাবির ৪৯০ কোটি টাকা বাজেট অনুমোদন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৯০ কোটি ৬১ লাখ টাকা প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২তম সিনেট অধিবেশনে সদস্যদের সম্মতিক্রমে এই বাজেট অনুমোদিত হয়। অনুমোদিত এ বাজেটে শিক্ষা আনুষঙ্গিক খাতে বাজেট বরাদ্দ হয়েছে ৩৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
বাজেটের সিংহভাগ বেতন ও ভাতা খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে। যার পরিমাণ ৩১২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
এ ছাড়া এ অধিবেশনে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের ৩৯১ কোটি ৪৮ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেটও অনুমোদিত হয়েছে। এই অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ২৯৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এন্তাজুল হক।
সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে সিনেট অধিবেশনের কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর মরহুম বিশিষ্টজনদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গ্রহণ এবং তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করে তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়। সিনেট সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিনের সভাপতিত্বে দিনব্যাপী এ সিনেট অধিবেশন শুরু হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এন্তাজুল হক জানান, অনুষ্ঠিত সিনেট অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সায়েন উদ্দিন আহমদ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। বাজেটের ওপর আলোচনা শেষে তা অনুমোদিত হয়। বাজেট সংক্রান্ত আলোচনায় সিনেটররা বাজেটে শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আয় বৃদ্ধি এবং আনুষঙ্গিক খাতে ব্যয় সংকোচনসহ বেশ কিছু পরামর্শ দেন।
রেজিস্ট্রার আরো জানান, বাজেটে প্রধান আয়ের উৎস হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশন (বিমক) থেকে পূর্বের ঘাটতি ২৬ কোটি টাকাসহ ৪৯৯ কোটি আট লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৯৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকার চাহিদার বিপরীতে বিমক থেকে বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছিল ২২৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। এবার বাজেটে দ্বিতীয় আয়ের উৎসব হিসেবে নিজস্ব উৎস থেকে আয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নিজস্ব উৎস থেকে আয় ছিল ২২ কোটি ২৫ লাখ।
এ সিনেট অধিবেশনে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুমোদন এবং ২১তম সিনেট অধিবেশনের কার্যবিবরণী উপস্থাপন করা হয়। বার্ষিক প্রতিবেদন অনুমোদন পর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহান প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন। এ ছাড়া কয়েকজন সিনেট সদস্যের প্রশ্ন, প্রস্তাব ও অভিমত নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
সিনেট অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও সংস্কার পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আগামীতে শেখ রাসেল মডেল স্কুলের নতুন ভবন, ৪র্থ বিজ্ঞান ভবন, ৪র্থ কলা ভবন, মতিহার হল ও কৃষি অনুষদ ভবনের বাকি কাজ সম্পন্ন, ১০ তলা বিশিষ্ট আবাসিক ভবন, ২০তলা বিশিষ্ট সেন্ট্রাল সায়েন্স বিল্ডিং, আইসিটি ভবন, পার্ক, সঙ্গীত ও নাট্যকলা বিভাগের কালচারাল সেন্টার, আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ, বৈদ্যুতিক ও কাঠের কাজের জন্য ওয়ার্কশপ স্থাপন, ক্যাফেটেরিয়ার আধুনিকায়ন, অভ্যন্তরীণ প্রধান রাস্তাগুলো প্রশস্তকরণ, ক্যাম্পাসের জন্য ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কম্বাইন্ড পাওয়ার স্টেশন স্থাপন ইত্যাদির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’
উপাচার্য আরো বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ২৫ বছর মেয়াদি একটি মাস্টার প্লান প্রণয়নের জন্যও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’
সিনেট অধিবেশনে ৬০ জন সিনেট সদস্য উপস্থিত ছিলেন। অধিবেশন সঞ্চালনা করেন সিনেটের সচিব বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ এন্তাজুল হক।
২০০১ সালের পর সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৮ মে সিনেটের ২১তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।