জাবির দুই সাংবাদিককে ‘হুমকি’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত দুই সাংবাদিককে ক্যাম্পাস থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তরের সাভার প্রতিনিধি মিঠুন সরকারের বিরুদ্ধে।
হুমকি পাওয়া দুই সাংবাদিক নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর আবেদন করেছেন। একই সঙ্গে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা সোমবার উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের স্মারকলিপি এবং দুই সাংবাদিকের অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, গত ৮ জুন রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিকে বেধড়ক মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় পরদিন ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ।
কিন্তু একাত্তর টেলিভিশনের সাভার প্রতিনিধি মিঠুন সরকার মানববন্ধনের ঘটনাটিকে গত ৪ জুন নির্বাচনের দিন খ্রিস্টানপল্লীতে সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হিসেবে প্রচার করে। ৪ জুন সাভারের খ্রিস্টানপল্লীতে মিঠুন সরকারের ওপরই হামলার ঘটনা ঘটেছিল।
এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদ করে গত ১১ জুন জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ও দৈনিক প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রাসেল রাব্বী ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শরিফুল ইসলাম সীমান্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি সমালোচনামূলক পোস্ট দেন।
পোস্ট দেওয়ার কিছুক্ষণ পর প্রথমে শরিফুল ইসলামের মুঠোফোনে একাত্তর টেলিভিশনের সাভার প্রতিনিধি মিঠুন সরকার পরিচয় দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। একই সঙ্গে পেশাদার মাদকসেবী সাজিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করার ও ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার হুমকি দেন। পরে রাসেল রাব্বীর মুঠোফোনেও একই পরিচয় দিয়ে গালিগালাজ ও মারধর করার হুমকি দেন মিঠুন সরকার।
এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরই রাসেল রাব্বিকে মাদক ব্যবসায়ী দাবি করে ‘দেশ বাংলা’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করা হয়।
পরবর্তী সময়ে গত ১২ জুন রাসেল রাব্বী ও শরিফুল ইসলাম নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহার কাছে লিখিত আবেদন করেন।
এদিকে সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত সাংবাদিকরা ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আবুল হোসেনের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দেন। এ সময় অধ্যাপক আবুল হোসেন ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য একাত্তর টিভির সাভার প্রতিনিধিকে ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য নিরাপত্তা শাখাকে নির্দেশনা দেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তা জেফরুল হাসান চৌধুরী সজল বলেন, উপ-উপাচার্য বলেছেন, ওই সাংবাদিককে যেন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না দেওয়া হয়।
মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও এ ব্যাপারে মিঠুন সরকারের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে এর আগে সাংবাদিকদের কাছে হুমকির বিষয়টিকে ভুল বোঝাবুঝি দাবি করেছেন তিনি। এর আগে ‘মিথ্যা সংবাদ’ পরিবেশনের বিষয়টিকেও ভুল হিসেবে দাবি করেছেন তিনি।
এদিকে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ছাত্র ইউনিয়ন জাবি শাখা এবং জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট।