ঢাবির রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকার প্রকাশক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমানকে অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আজ শুক্রবার বিকেলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী জানান, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমানকে সব ধরনের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। স্মরণিকার ঘটনা তদন্তে দ্রুত একটি কমিটি করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আজ একটি স্মরণিকা প্রকাশ করে। এই স্মরণিকার প্রকাশক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৯৫ বছর উদযাপন কমিটির সদস্যসচিব সৈয়দ রেজাউর রহমান ‘স্মৃতি অম্লান’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন। এতে তিনি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের পরিচিতি তুলে ধরতে গিয়ে লেখেন, ‘জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, সাবেক সেনাপ্রধান ও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।’
সেই সঙ্গে স্মরণিকার ১৩ নম্বর পৃষ্ঠায় জগন্নাথ হলের বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যালঘু তথা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সম্প্রদায় এবং উপজাতি ছাত্রদের জন্য এই হল প্রতিষ্ঠিত হয়।
দুপুরে টিএসসিতে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আলোচনা সভা চলাকালে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রেজাউর রহমানের লেখাটি ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার দৃষ্টিতে আসে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ নেতা ও শিক্ষকরা প্রতিবাদ জানান। উপাচার্য তাৎক্ষণিক ওই স্মরণিকা বাজেয়াপ্ত ও স্মরণিকা কমিটি বাতিল ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানান।
সভা শেষে দুপুর ১২টা থেকে পৌনে ১টা পর্যন্ত ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রেজাউর রহমানকে তাঁর কার্যালয়ে তালাবন্দি করে রাখেন। প্রতিবাদে তাঁরা স্মরণিকায় আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী ঘটনাস্থলে গিয়ে রেজাউর রহমানকে তালামুক্ত করে বের করে নিয়ে যান।
ওই নিবন্ধের প্রতিবাদে আজ জুমার নামাজের পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা মধুর ক্যান্টিন থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন এবং তাঁর পদত্যাগ দাবি করেন। দুপুর আড়াইটার দিকে উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক গাড়িতে করে তাঁর বাসভবনের সামনে এলে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করেন। একপর্যায়ে তাঁরা উপাচার্যের গাড়িতে কিল-ঘুষি দেন এবং জুতা দিয়ে আঘাত করেন। এ সময় উপাচার্যের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের এক উপপরিদর্শক (এসআই) রক্ষার চেষ্টা করলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাঁকে মারধর করে আহত করেন। উপাচার্য গাড়ির মধ্যে বসে থাকায় তিনি আহত হননি। ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী উপাচার্যের দিকে জুতা ছুড়ে মারেন। তবে তা গায়ে লাগেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা উপাচার্যকে ঘেরাও করে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের হাত থেকে রক্ষা করে তাঁকে বাসভবনের ভেতরে ঢুকতে সহযোগিতা করেন। অবশ্য ছাত্রলীগের ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা এখনো উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে রেখেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘স্মরণিকায় জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে উল্লেখ করায় বিক্ষুব্ধ কর্মীরা উপাচার্যের ওপর হামলার চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা তাঁকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে তাঁর বাসভবনে প্রবেশে সহযোগিতা করি।’