জবি শিক্ষার্থী দীপা হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) গণিত বিভাগের মাস্টার্স শেষ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী দীপা রাণী নাথ হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। জবির সাধারণ শিক্ষার্থী ও দীপার পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে এ মানববন্ধনে দীপার স্বামী সুব্রত চৌধুরী ও নিহতের শ্বশুর-শাশুড়িকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
আজ সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে নিহত দীপার বাবা দীজেন্দ্র লাল দেবনাথ বলেন,‘আমার মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া, শিক্ষিত, বুদ্ধিমতি এবং অধিকার সচেতন। সে সবসময় অপমৃত্যুর বিপক্ষে কথা বলত। সে কখনো আত্মহত্যা করতে পারে না। মৃত্যুর দিন বিকেল সাড়ে ৪টায় আমি তাঁর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছি। সে খুব স্বাভাবিকভাবেই কথা বলেছে। কিন্তু সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দীপার স্বামী আমাকে জানায় আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে আর তার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে আছে।’
দীপার পরিবারের সদস্যরা জানান,২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমে নিহত দীপা রাণী নাথ ও সুব্রত চৌধুরী বিয়ে করেন। তাঁদের দাবি, বিয়ের পর সুব্রতের বাবা-মা দীপাকে মেনে নেয়নি। বিভিন্ন সময় যৌতুক, পড়াশোনা বন্ধসহ নানা অজুহাতে দীপাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করত। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি স্বামী,শ্বশুর-শাশুড়ির হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়ে দীপা বাবার বাড়িতে চলে আসেন। পরে দীপার স্বামী সুব্রত চৌধুরী দীপার বাবাকে অনুরোধ করে এবং পরবর্তী সময়ে আর এমন ঘটনা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে দীপাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান।
মানববন্ধনে নিহত ছাত্রীর সহপাঠীরা জানান, দীপা গত ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। সেদিনও স্বাভাবিক ছিলেন তিনি। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেও সহপাঠীদের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। কিন্তু ২১ অক্টোবর সন্ধ্যায় সবাই জানতে পারে আত্মহত্যা করেছেন দীপা।
সহপাঠীদের দাবি, দীপার স্বামীর পরিবার পরিকল্পিতভাবে দীপাকে খুন করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে। কারণ দীপা যখন আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করা হচ্ছে তখন তাঁর স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যরাও বাসায় উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দীপা যে কক্ষে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানানো হয়েছে কক্ষটি ভেতর থেকে আটকানো ছিল না এবং দীপার ফাঁসি দেওয়ার পর আইনানুগভাবে দীপা রাণীর স্বামী পুলিশকে খবর না দিয়ে নিজেই মরদেহ ফাঁসির দড়ি থেকে নামিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের চিহ্ন মুছে ফেলতে দীপা রানীর স্বামী তাঁর মরদেহ ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পুড়িয়ে ফেলার চাপ দেন, যা সন্দেহজনক।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন নিহত দীপা রাণীর মা রূপালী দেবনাথ, বড় বোন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী সুবর্ণা দেবনাথ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান মহিলা ঐক্য পরিষদের ঢাকা মহানগরের সভাপতি সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গণিত বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আইয়ুব আলী, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী সুকুমার চন্দ্র সাহা, জবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এফ এম শরীফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক এস এম সিরাজুল ইসলামসহ অনেকেই।
এদিকে এ ব্যাপারে দীপা রাণীর স্বামী সুব্রত চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের মাধ্যমে সঠিক তথ্য জানা যাবে। এ সম্পর্কে এখন আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এ কথা বলে তিনি মোবাইল ফোনের কল কেটে বন্ধ করে দেন।
দীপা রাণীর হত্যা মামলার বিষয়ে জানতে কলাবাগান থানায় ফোন দেওয়া হলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহেল এনটিভি অনলাইন বলেন, দীপা রাণী হত্যায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় গ্রেপ্তার সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,ময়নাতদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।