অভিনয় আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে : পাওলি দাম
এবারে সিনেমার পর্দায় আসতে চলেছে পরিচালক দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের ছবি ‘নাটকের মতো’। যে ছবির অন্যতম ‘খেয়া’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন টলিউড অভিনেত্রী পাওলি দাম। তাঁর মতে, অসাধারণ এই ছবির কনসেপ্ট। সে সঙ্গে অত্যন্ত সাহসী ভাবনার ছবি এই ‘নাটকের মতো’। সাতের দশকের জনপ্রিয় নাট্যাভিনেত্রী কেয়া চক্রবর্তীর ব্যক্তিগত এবং অভিনয়জীবন নিয়ে প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর গবেষণা করে তার পর পরিচালক দেবেশ চট্টোপাধ্যায় ছবিটির চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন। যে ছবির গল্প একসময় বাংলা থিয়েটার তথা অভিনয়জগতের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল, সে গল্পকেই এবার সিনেমায় রূপ দিলেন পরিচালক। এই ছবির মুখ্য চরিত্র ‘খেয়া’। এই ছবি নিয়ে এক খোলামেলা আড্ডায় পাওলি জানালেন অনেক কথাই। ‘খবর ৩৬৫ দিন’ পত্রিকার সৌজন্যে পাওলির সেই সাক্ষাৎকারের কিছু ঝলক।
পাওলি দাম ‘নাটকের মতো’ ছবিতে তাঁর চরিত্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমি একজন অভিনেত্রী। অভিনয় করাটাই আমার কাজ। এ ছবিতে পরিচালক খেয়ার মৃত্যুকে দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা নাকি হত্যা হিসেবে দেখাবেন, সেটা তাঁর ভাবনা।’ এই ছবির কাজ শুরুর প্রথম পর্যায় থেকেই পরিচালককে ছবির বিষয়বস্তু নিয়ে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। বারবার কৈফিয়ত দিতে হয়েছে যে, তাঁর এই ছবিতে নাট্যাভিনেত্রী কেয়া চক্রবর্তীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে কোনটাকে জোর দেওয়া হবে? আদৌ কি কোনো হত্যাকারীর নাম তুলে ধরা হবে? নাকি নিছক আত্মহত্যা বলেই চালিয়ে দেবেন পরিচালক? পাওলির সাফ জবাব, পরিচালকই জানেন উত্তরটা। তবে কেয়া চক্রবর্তী যেমন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই করে গিয়েছিলেন অভিনয়ের জন্য—পাওলি বলেন, ‘আমিও বাস্তব জীবনে তেমন লড়াই চালিয়ে যাব। তবে আত্মহত্যা করার কোনো প্রশ্নই নেই। কারণ, অভিনয় আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।’
পাওলি ছবিতে তাঁর পছন্দের পরিচালককে নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে একেবারেই রাজি নন। পরিচালক স্বপন সাহা থেকে শুরু করে ঋতুপর্ণ ঘোষ, সতীশ কৌশিক, গৌতম ঘোষ, বিবেক অগ্নিহোত্রী কিংবা দেবেশ চট্টোপাধ্যায়—সবার সঙ্গেই কাজ করেছেন। এঁদের মধ্যে কে তাঁর পছন্দের, সেই প্রশ্নে পাওলির উত্তর, “আলাদা করে কারো নাম বলে কারো সঙ্গে শত্রুতা বাড়াতে চাই না। তবে হ্যাঁ, ‘কালবেলা’ ও ‘এলার চার অধ্যায়’ এ ছবি দুটি দর্শকমহলে সবচেয়ে বেশি চর্চিত হয়েছে। তিনি বলেন, আশা করছি, এবার ‘নাটকের মতো’ ছবিও দর্শকের মন কাড়বে। এর আগে ঠিক যেভাবে ‘কালবেলা’ ছবিতে মাধবীলতা ও ‘এলার চার অধ্যায়’ ছবিতে এলা মানুষের মনে থেকে গেছে, এবার খেয়া চরিত্রও মানুষের মনে থাকবে।”
পাওলি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিযোগিতায় বিশ্বাসী নন। তাঁর মতে, ‘ইন্ডাস্ট্রিতে কারো নাম বেশি, কারো নাম কম হয়...এভাবে আমি কোনো দিনই ভাবিনি। আমার মনে হয়, আমি যে ধরনের চরিত্রগুলোতে অভিনয় করি, সেগুলো কোথাও না কোথাও মানুষের মনে থেকে যাবে। আমি অসাধারণ কিছু ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি। বেশির ভাগ পরিচালক আমাকে ফোকাসে রেখেছেন। এ জন্য আমি গর্বিত।’
‘নাটকের মতো’ ছবিতে অভিনয়ের আগে চার মাস কোনো কাজ করেননি বলে জানান পাওলি। তিনি বলেন, ‘এই ছবি শুরুর আগে পরিচালক দেবেশ চট্টোপাধ্যায় প্রত্যেক সপ্তাহে আমাকে একটি করে নাটকের স্ক্রিপ্ট দিতেন। আর সেগুলো নিয়ে পুরো রিয়েল স্টেজে আমরা পারফর্ম করেছি। তার পর থিয়েট্রিক্যাল বডি ল্যাঙ্গুয়েজ থেকে শুরু করে কথা বলার ধরন—সবটাই শিখতে হয়েছে আমাকে। আসলে যে সময়ের প্রেক্ষাপটে ছবিটা তৈরি হয়েছে, সে সময় থিয়েটারকে প্রমোট করার জন্য আজকালের মতো মিডিয়া সাপোর্ট ছিল না। ছবি, তথ্য তো দূরের কথা। এমনকি কেয়া চক্রবর্তীর আদলে আমার লুক টেস্ট করার সময় নেট খুঁজে তেমন কোনো ছবিও বের করা যায়নি। তাই বেশ কঠিন ছিল চরিত্রটাকে জানা। দেবেশদা আমাকে কেয়া চক্রবর্তীর ওপর লেখা একটা বই দিয়েছিলেন। সেটা পড়ে আমি খানিকটা ধারণা তৈরি করেছিলাম। তা ছাড়া এর আগে আমি কালবেলার মতো একটা ছবি করেছি, যে ছবিটা ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়েছিল। তাই তখনকার নারীদের জীবনযাপন সম্পর্কে একটা আইডিয়া ছিলই।’ পাওলি বলেন, “এই ছবিতে তিনটে লেয়ার অফ অ্যাক্টিং ইউজ করেছি। একটা পিওর রিয়েলিটি জোন, একটা পিওর থিয়েট্রিক্যাল জোন, আরেকটি ট্রানজিশন ফ্রম থিয়েট্রিক্যাল টু রিয়েলিটি জোন। ছবিতে সব মিলিয়ে পাঁচটা নাটক ছিল। ‘ভালো মানুষ’, ‘আন্তিগোনে’, ‘প্রস্তাব’, ‘তিন পয়সার পালা’ ও ‘নটি বিনোদিনী’। প্রতিটি নাটকের ক্ষেত্রে যেমন হয়, স্টেজে রিহার্সেল থাকে এবং তার পর সেটাকে মঞ্চস্থ করা, সবটাই দেখানো হয়েছে ছবিতে। কাজেই এ ‘নাটকের মতো’ ছবির দৌলতে বেশ কয়েকটি ভালো নাটকে অভিনয় করার সুযোগও পেয়ে গেলাম। যেটা আমার উপরি পাওনা।”