এখনকার নির্মাতারা বেশির ভাগই মূর্খ : রাজ্জাক
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি নায়করাজ রাজ্জাক। গত ২৩ জানুয়ারি ছিল তাঁর জন্মদিন। এ বছর ৭৫ বছরে পা রাখলেন তিনি। গত বছর থেকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড থেকেও অব্যাহতি নেন গুণী এই অভিনেতা। এখন বলতে গেলে অবসরেই কাটছে তাঁর সময়। এখন সময়টা তাঁর কীভাবে কাটছে, চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে।
প্রশ্ন : কেমন আছেন আপনি?
উত্তর : এখন সুস্থ আছি। সময় ভালো কাটছে।
প্রশ্ন : কেমন কাটল জন্মদিন?
উত্তর : সবার ভালোবাসা পেয়ে আমি আবারও মুগ্ধ।
প্রশ্ন : অবসর সময় কীভাবে কাটছে আপনার?
উত্তর : আমার তো সাতজন নাতি-নাতনি। তাদের নিয়েই এখন আমার জীবন। তাদের সঙ্গে গল্প করেই সময় কেটে যায় আমার। ওদের সঙ্গে আমি খেলাধুলাও করি। মাঝেমধ্যে বইও পড়ি।
প্রশ্ন : শুনেছিলাম ছোটবেলায় আপনি অনেক জেদী ছিলেন। আপনার নাতি-নাতনিরা কেউ কি আপনার মতো জেদী হয়েছে?
উত্তর : সবাই হয়নি। কেউ কেউ হয়েছে। সম্রাটের ছোট মেয়ে আরিবা অনেক জেদী। তবে ও অনেক মিষ্টিও বটে।
প্রশ্ন : একসময় আপনি নিজে ফুটবল খেলেছেন। খেলা দেখতেও ভালোবাসতেন। এখনো কি টিভিতে খেলা দেখা হয়?
উত্তর : টিভিতে ফুটবল খেলাই বেশি দেখি। গভীর রাতে টিভিতে খেলা দেখতে এখনো ভালো লাগে আমার। ক্রিকেট খেলাও দেখা হয়। আমাদের দেশের ক্রিকেট অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
প্রশ্ন : একসময় আপনার পরিচালনায় আপনার সন্তানরা কাজ করেছেন। এরপর নিজের সন্তানদের পরিচালনায় আপনিও কাজ করেছেন। বিষয়টি কীভাবে দেখেন আপনি?
উত্তর : আমার সন্তানদের কাজ আমিই শিখিয়েছি। ওদের পরিচালনায় কাজ করতে পেরে সত্যি আমি খুব গর্বিত। ওদের নিদের্শনায় কাজ করতে অনেক ভালো লাগে ।
প্রশ্ন : আপনার জীবনে প্রথম পারিশ্রমিক ছিল ৬৫ টাকা। সেই টাকা পেয়ে কী করেছিলেন?
উত্তর : সেই সময় প্রতি সপ্তাহে নাটকে অভিনয় করে পেতাম ৬৫ টাকা। ওই টাকা দিয়েই পুরো সংসার চালাতাম আমি।
প্রশ্ন : মোট ১৬ জন নায়িকার সঙ্গে অভিনয় করেছেন। বিশেষভাবে কোনো নায়িকার কথা কি মনে পড়ে?
উত্তর : সবাইকে মনে পড়ে। কাউকে বাদ দিতে পারব না। আমি মনে করি, নায়ক হিসেবে সব নায়িকাই ছিল আমার জন্য বেস্ট।
প্রশ্ন : অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন। বিশেষভাবে কোনো চলচ্চিত্রের কথা বলবেন কি?
উত্তর : প্রত্যেকটি চলচ্চিত্রের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। স্মৃতিও অনেক। এই মুহূর্তে ‘বাদী থেকে বেগম’ চলচ্চিত্রের কথা মনে পড়ছে। আমার সঙ্গে এই ছবিতে ববিতা অভিনয় করেছিলেন। ছবিটির প্রিন্ট এখন মনে হয় আর পাওয়া যাবে না। তবে এই ছবি তরুণ প্রজন্ম দেখলে অনেক ভালো হতো। অনেক সুন্দর একটা ছবি ছিল।
প্রশ্ন : জীবনে অনেক পুরস্কার ও প্রশংসা পেয়েছেন। কোনো বিশেষ প্রশংসা বা পুরস্কারের কথা মনে আছে কি?
উত্তর : অনেক প্রশংসা পেয়েছি, এটা সত্য। এখনো অনেকে করেন। তাই নিদির্ষ্টভাবে স্মরণীয় প্রশংসার কথা বলা মুশকিল। সব প্রশংসাই আমার কাছে মূল্যবান। আর পুরস্কারের কথা যদি বলি, বাংলাদেশ সরকার আমাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়েছে। আমি অনেক গর্বিত।
প্রশ্ন : এখনকার চলচ্চিত্র সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
উত্তর : এখন যাঁরা চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন তাঁরা বেশির ভাগই মূর্খ। হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া কেউই ছবি বানাতে পারছেন না। আর এখন যে ছবিগুলো বানানো হয় সেগুলো না হয় ছবি, না হয় নাটক। গত বছর থেকে আমি বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের সেন্সরে বোর্ডেও নেই। তাই এখন আর ওভাবে ছবিও দেখা হয় না।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ভালো হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি?
উত্তর : আসলে চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়ানোর অবস্থা আমি আর দেখছি না। আমি নিজেও অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু সফল হতে পারিনি। তবে আশা তো রাখা যেতে পারে।