‘আন্দোলন বেগবান করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে’
সরকার পতনের আন্দোলনকে আরও বেগবান করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার ঘোষণা দিলেন বিএনপি নেতারা। শনিবার দুপুরে রংপুরের কালেক্টরেট ঈদগাঁও মাঠে আয়োজিত গণসমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন বিএনপি নেতারা।
এসময় মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান বলেন, আওয়ামী লীগের মরার যাত্রা শুরু হয়েছে। তাদের মরণ আর কেউ ঠেকাতে পারবে না। এই সরকারের পতন আর কেউ ঠেকাতে পারবে না। আপনারা (বিএনপি নেতাকর্মীরা) কি আর ঘরে থাকবেন? বাংলাদেশের মানুষ কি আর ঘরে থাকবে? কেউ ঘরে থাকবে না।
তিনি স্লোগান দেন, শেখ হাসিনার দিন শেষ, খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ।
জাতীয় শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, আন্দোলনকে আরও বেগবান করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে।
ওলামা দলের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ শাহ মো. নেছারুল হক বলেন, বাংলাদেশে যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে। আমাদের নেতা তারেক রহমান এই ঘোষণা দিয়েছেন। আমার নেতার নির্দেশে আজকে রাজপথে নেমেছি।
এছাড়া স্থানীয় নেতারা এক দফার আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ঘোষণা দেন।
সমাবেশে উপস্থিত হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, দলের যুগ্ম মহাসচিব ও বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুন আর রশিদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাঈফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।
এছাড়া জাতীয় শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, ওলামা দল কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ শাহ মো. নেছারুল হক, রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশের শুরুতেই স্থানীয় বিএনপি এবং রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা বিএনপির শীর্ষনেতারা বক্তব্য দেন।
শনিবার বেলা ১২টা রংপুরের কালেক্টরেট ঈদগাঁও মাঠে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্যদিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে আসলে নেতাকর্মীরা স্লোগানে এবং হাত তালিয়ে দিয়ে তাদের বরণ করে দেন। মির্জা ফখরুলসহ নেতারা হাত নাড়িয়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন।
গত দুই দিন নেতাকর্মীদের জনতার স্রোত সময় বাড়ার সাথে সাথে সমাবেশস্থল জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানা দাবিতে বিএনপি দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করছে। এর ধারাবাহিকতায় রংপুর বিএনপির চতুর্থ গণসমাবেশ।
সমাবেশের মূল ব্যানারে লেখা হয়, ‘অসহনীয় দ্রব্যমূল্য, লাগাতার লোডশেডিং, দুর্নীতি-দুঃশাসন, লুটপাট, গুম, হত্যা, মামলা-হামলা, ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি’তে এ গণসমাবেশ।
তীব্র রৌদ্রের মধ্যেও কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য শুনতে মুখিয়ে আছেন বিভাগের আট জেলা থেকে আসা নেতাকমীরা। মঞ্চে উপস্থিত হয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে মাঠে জায়গা না পেয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও সড়কের অলিগলিতে অবস্থান নিয়েছেন নেতাকর্মীরা। সমাবেশস্থলের চারদিকে প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তা কানায় কানায় পূর্ণ। হাঁটা চলার মতোও নেই পরিবেশ। এদিকে এখনো বিভিন্ন জেলা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিলে নিয়ে আসছেন নেতাকর্মীরা। তবে মাঠ ও রাস্তাঘাট নেতাকর্মীদের চাপে মিছিলগুলো সমাবেশস্থলে পৌছাতে পারছে না।
রংপুরে সমাবেশের মঞ্চে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য একটি ফাঁকা আসন রাখা হয়েছ। এর আগে, ময়ময়সিংহ ও খুলনা বিএনপির সমাবেশে এমনটি রাখা হয়েছিল।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খন বলেন, অন্যায়ভাবে খালেদা জিয়াকে বন্দী করে রেখেছে সরকার। তিনি মুক্ত থাকলে এখানে উপস্থিত থাকতেন। তাই আসন ফাঁকা রাখা হয়।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় ১০ বিভাগে গণসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম প্রথম কর্মসূচি পালন করে। এরপর ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে। সর্বশেষ ২২ অক্টোবর খুলনায় গণসমাবেশ করে বিএনপি।
আগামী নভেম্বর বরিশালে, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী এবং ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপির তৃতীয় ধাপের কর্মসূচি শেষ হবে। এরপর নতুন কর্মসূচি আসবে বলে জানান বিএনপি নেতারা।