যৌন হয়রানির দায়ে বাধ্যতামূলক অবসরে রাবি শিক্ষক
ছাত্রীকে যৌন হয়রানির দায়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সিন্ডিকেটের ৪৬৫তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আমজাদ হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মজুমদার। তিনি রাবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন, “বিষয়টি সিন্ডিকেটে উঠলে এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। সব দিক বিবেচনায় নিয়ে উপ-উপাচার্য ছাড়া বাকি সব সদস্য তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর বিষয়ে একমত হন। তবে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছেন।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিবেশ ভালো রাখার জন্যই উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পর যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এত দিন ওই কমিটি বিভিন্নভাবে তাদের কার্যক্রম বিধি অনুযায়ী করেনি। নীতিমালায় কোন অপরাধে কী শাস্তি হবে, তা-ও সঠিকভাবে উল্লেখ নেই। এ ছাড়া কমিটির অনেক সদস্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তারা কার্যক্রম চালিয়ে গিয়েছিল, যা সঠিক হয়নি। তাই সিন্ডিকেটে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে একটি স্বচ্ছ কমিটি গঠনের কথা বলেছি।’
সিন্ডিকেট ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২১ অক্টোবর বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। ছাত্রীর ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি তদন্ত শুরু করে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ২০১৫ সালের ২৭ এপ্রিল অভিযুক্ত শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হয়।
নিপীড়ন নিরোধ কমিটির সুপারিশ সিন্ডিকেটে ৪৬১তম সভায় উত্থাপন করা হয়। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান আবার তদন্তের দাবি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা সাপেক্ষে কোষাধ্যক্ষ সায়েন উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি রিভিউ কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি আবার তদন্ত শেষে অভিযোগের সত্যতা পায়। এর পর বয়স ও সম্মানের কথা বিবেচনা করে ড. কামরুলকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সুপারিশ করে।
যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন কমিটি সূত্রে জানা যায়, অধ্যাপক কামরুল হাসান মজুমদার ওই ছাত্রীকে মোবাইলে একাধিকবার আপত্তিকর প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে সম্মত হলে বিভাগে ভালো ফলের নিশ্চয়তাসহ শিক্ষক হওয়ার ব্যাপারে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করেন তিনি। ওই ছাত্রী তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রথম দিকে শিক্ষার্থী শিক্ষককে নানাভাবে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু দিন দিন শিক্ষকের হয়রানির মাত্রা আরো বেড়ে যায়। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
এ বিষয়ে জানতে শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মজুমদারকে একাধিকবার কল করা হয়। তবে কলটি রিসিভ হয়নি।