আ.লীগনেতাদের নিয়ে স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ফুলপুরের ইউএনওর
গতকাল সোমবার মহান বিজয় দিবসে (১৬ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগপন্থী মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগনেতাদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেছেন ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম সীমা। এ কারণে বিএনপিপন্থি মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপিনেতারা সেই অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে ফুলপুর হানাদার মুক্ত দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসেও আওয়ামী লীগপন্থী মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগনেতাদের নিয়ে অনুষ্ঠান করেন ইউএনও সাদিয়া ইসলাম সীমা। আওয়ামীপন্থী এসব মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যেকের রয়েছে দলীয় পদ ও পদবি। ১৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাওয়া আওয়ামী লীগপন্থী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সালাম প্রিন্স, উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাতেন, সাবেক সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা বিজন সরকার ও মুক্তিযোদ্ধা ফায়েজ উদ্দিন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকারি কোটা বহালের জন্য উচ্চ আদালতে রিটকারী ওহিদুল ইসলাম তুষারের বাবা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক জানান, তিনি চার-পাঁচ দিন রিহার্সেল করে ছেলেমেয়েদের ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ গানটি গাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের তৈরি করেন। কিন্তু ইউএনও সেই গান গাইতেও বাধা দিয়েছেন। ইউএনও বলেন, গানটি বিএনপির দলীয় সংগীত বলে বিবেচিত। তাই পরিবেশন করা যাবে না। তবে অনুষ্ঠান শুরুর পর ফুলপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গান পরিবেশনের অনুমতি দেন তিনি। পরে গানটি পরিবেশন শুরু হলে বিক্ষুব্ধ দর্শকের বাধার মুখে পড়ে।
ইউএনও মাঝেমধ্যেই আওয়ামী লীগনেতাদের তাঁর কার্যালয়ে ডেকে এনে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য এমদাদ হোসেন খান বলেন, এখানে বলার কিছু নেই। ফুলপুরের ইউএনও আপাদমস্তক আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগঘেষা লোকজনকে নিয়েই অনুষ্ঠান করতে বেশি পছন্দ করেন। তাই আমরা তাঁর আয়োজনে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান বয়কট করেছি।
কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবুল বাশার আকন্দ বলেন, আমরা ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। কিন্তু ফুলপুরের ই্উএনওর কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয় তিনি পতিত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছেন। আমাদের পাশ কাটিয়ে, কোনো পরামর্শ না করে আওয়ামীপন্থী মুক্তিযোদ্ধা ও নেতাদের দাওয়াত করে এনে অনুষ্ঠান করাচ্ছেন। এজন্য আমরা বিএনপিপন্থী মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ হয়ে বিজয় দিবসে আয়োজিত প্রশাসনের অনুষ্ঠান বয়কট করেছি।
এ বিষয়ে ইউএনও সাদিয়া ইসলাম সীমা বলেন, ফুলপুরে ৯১ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। বিএনপিপন্থী মুক্তিযোদ্ধা একজনও নেই। আমি সবার সঙ্গে কথা বলেই আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে ফুল দিয়েছি।