শেখ হাসিনা-রেহানার বাগানবাড়িগুলো অসামাজিক কর্মকাণ্ড ও মাদকসেবীদের আখড়া
পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানার জৌলুসপূর্ণ বাগানবাড়িগুলো এখন অসামাজিক কর্মকাণ্ডসহ মাদকসেবীদের নিরাপদ ও অভয় আশ্রমে পরিণত হয়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর শেখ হাসিনা ও রেহানার গাজীপুরের বাগানবাড়িগুলো জনরোষে বিধ্বস্ত হয়। এখন দিনের বেলায় এই বাগানবাড়িগুলো খেলার মাঠ ও মানুষের ঘুরে বেড়ানোর জায়গা হলেও রাতে পরিণত হয় মাদকসেবী ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের আস্তানায়। দুটি বাগান বাড়ি এলাকাবাসী ওয়াল গেঁথে বন্ধ করে দিলেও একটি রয়েছে উন্মুক্ত।
এলাকাবাসয় জানায়, এক সময় নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা জৌলুসপূর্ণ শেখ পরিবারের বাগানবাড়িগুলো এখন মাদক সেবনকারীসহ নানা অসামাজিক, অনৈতিক কর্মকাণ্ডের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
গাজীপুরের কোনাবাড়ী শিল্প এলাকার পাশেই তেলিরচালা এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে অন্তত ১০ একর জমির উপর স্থাপিত হয়েছিল শেখ হাসিনা-রেহানার একটি বাগান বাড়ি। বিশাল আকারের শান বাঁধানো পুকুরঘাট, সুইমিং পুল, খেলার মাঠ, বড় বড় গাছের বাগান, বিশালাকার গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা ও অত্যাধুনিক ডুপ্লেক্স বাংলো বাড়িসহ কী ছিল না সেখানে?
তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের গোপনীয় মিটিং ও কোনাবাড়ী কালিয়াকৈরসহ অন্যান্য শিল্প অঞ্চলের কারখানাগুলোর ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও হিসাব-নিকাশ এই বাগানবাড়িতে বসেই করা হতো। সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ সব বিষয়ের নিয়ন্ত্রক ছিলেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর বিপ্লবী জনগণের রোষানলে পড়ে এই বাগান বাড়িটি। ধ্বংস করে দেওয়া হয় বাগানবাড়ি প্রতিটি স্থাপনা।
বিশাল এ বাংলো এখন শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা, আড্ডা এবং মাদকসেবী ও পতিতাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
এলাকায় কোনো খেলার মাঠের ব্যবস্থা বা জায়গা ছিল না। এখন শিশুসহ সব বয়সিরাই খেলাধুলা বা আড্ডায় বসেন এই বাংলো এলাকায়।
এ ছাড়া গাজীপুর শহরের পাশে বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা ও মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির পাশে ফাওকাল এলাকায় অন্তত ২০ একর জমিজুড়ে স্থাপিত হয়েছে শেখ রেহানার আরও একটি অত্যাধুনিক বিলাসবহুল বাগানবাড়ি, যা তার দেবর ও শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক সিদ্দিকীর নামে বলে এলাকাবাসীর ধারণা। এখানেও আধুনিকতা ও জৌলুসের কমতি ছিল না। গত ৫ আগস্টের পর জনরোষে ভবনের ভেতরের সব কিছুই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আসবাবপত্রও। জনশূন্য এই বাগানবাড়ি যাতে মাদকসেবীদের আস্তানায় পরিণত না হয় সে জন্য এলাকাবাসী এর ফটকে ইটের গাঁথুনি দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে।
এ ছাড়া শহরের পাশে বাঙালগাছ এলাকায় শেখ রেহানার ভাসুর রফিক সিদ্দিকীর নামে অন্তত শতবিঘা জমির উপর স্থাপিত আরেকটি বিশাল আকার বাংলোবাড়ি। শত কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা জমি ও স্থাপিত এ সব বাংলোবাড়ি ৫ আগস্টের পর গণবিক্ষোভে ক্ষতি সাধন হয়। এলাকাবাসী এ বাগান বাড়ির প্রধান ফটকে ভিতর থেকে বন্ধ করে দিয়েছে।
পতিত স্বৈরাচারী সরকারের প্রধানদের এ সব বাংলোবাড়ি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করা হবে বলে জনগণের প্রত্যাশা।
মৌচাক এলাকার বাগানবাড়ি বিষয়ে জানতে চাইলে কালিয়াকৈর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কাওসার মাহমুদ বলেন, এগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি। তাঁরা তাঁদের নিজস্ব কেয়ারটেকারের মাধ্যমে দেখভাল করান। বর্তমান পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে কোনো নির্দেশনা আমরা এখনও পাইনি। নির্দেশনা পাওয়া গেলে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকায় শেখ রেহানা পরিবারের দুটি বাগানবাড়ি প্রসঙ্গে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন বলেন, এগুলোর বিষয়ে এসিল্যান্ডকে খোঁজ-খবর নিতে বলেছি। সবকিছু জেনে-শুনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।