এসির জন্য রসিদ ছাড়া অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হচ্ছে রাবিতে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে বিনা রসিদে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত এক হাজার ১০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শ্রেণিকক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র স্থাপনের জন্য এ অর্থ নেওয়া হচ্ছে বলে স্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রতিবছর ফরম পূরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে দিতে হয় ৫৭০ টাকা। কিন্তু এই ফরম পূরণের উন্নয়ন ফির নামে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত এক হাজার ১০০ টাকা দিতে বাধ্য করা অন্যায়।
শুধু রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে রসিদ ছাড়া অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, গত ৩০ জুলাই থেকে তৃতীয় বর্ষে চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ শুরু হয়। ১৮ আগস্ট পর্যন্ত সেই ফরম পূরণ করা যাবে।
আটটি কোর্সে ফরম পূরণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭০ টাকা। ওই টাকা জমা দিতে হচ্ছে অগ্রণী ব্যাংকের বিশ্ববিদ্যালয় শাখায়। কিন্তু এই টাকা ছাড়াও তাঁদের আরো এক হাজার ১০০ টাকা বিভাগে দিতে হচ্ছে। এর জন্য কোনো রসিদ বা কোন তহবিলে সেই টাকা নেওয়া হচ্ছে, তা শিক্ষার্থীদের জানানো হচ্ছে না। এরই মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী আর্থিক সমস্যার কথা বিভাগের শিক্ষকদের বলেও কোনো কাজ হয়নি।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ‘হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহেনজমেন্ট প্রজেক্ট’-এর (হেকেপ) অধীনে বিভাগটি ২০১৪ সালের জুনে প্রায় এক কোটি ১০ লাখ টাকা পায়। ওই টাকা দিয়েই মূলত বিভাগের এসব উন্নয়নসহ আরো বিভিন্ন কাজ করা হয়েছে। ওই প্রকল্প শেষ হয় এ বছরের জুনে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সায়েন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এভাবে রসিদ ছাড়া টাকা নেওয়ার অনুমোদন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া হয় না। ওই টাকা নেওয়ার বিষয়ে সব দায়িত্ব বিভাগের। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো তহবিলে টাকা নিতে হলে তার জন্য খাত উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট রসিদ দিতে হয়।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘এবারের তৃতীয় বর্ষ থেকেই প্রথমবারের মতো বাড়তি এই এক হাজার ১০০ টাকা শিক্ষার্থীদের থেকে নেওয়া হচ্ছে। এর আগে কোনো শিক্ষার্থীদের থেকে এভাবে টাকা নেওয়া হয়নি। তবে কোন খাতে এই টাকা নেওয়া হচ্ছে, তা বিভাগীয় সভাপতি ভালো বলতে পারবেন।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘এসি লাগানোসহ বিভিন্ন বিভাগীয় উন্নয়ন করার কারণেই মূলত এই টাকা নেওয়া হচ্ছে। এটা বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত।’ রসিদ ছাড়া টাকা নেওয়ার কোনো বিধান আছে কি না, সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি আমরা পরে ভেবে দেখব।’
বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন, ‘অনেক শিক্ষার্থী এরই মধ্যে আমার কাছে ওই টাকা না দেওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে এসেছিল। আসলে শিক্ষার্থীদের থেকে এসি ও বিভাগীয় উন্নয়ন বাবদ এত বিপুল পরিমাণ টাকা নেওয়া কখনই উচিত নয়। কারণ, আমাদের অনেক শিক্ষার্থী এমন আছেন, যাঁরা তিনবেলা ভালো করে খেতে পারেন না।
তাই এসির বাতাস খেয়ে এত টাকা তাঁরা দেবেন কেন?’