উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষশূন্য ইবি, কার্যক্রমে জটিলতা
উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদটি শূন্য রেখেই চলছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। শীর্ষ দুই কর্মকর্তা না থাকায় প্রশাসনিক ও একাডেমিকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রমে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
গত ৩০ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ফ্যাক্সবার্তায় তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকারকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর পর থেকে উপাচার্য পদটি এখন পর্যন্ত শূন্য রয়েছে।
অন্যদিকে গত নভেম্বর থেকে কোষাধ্যক্ষ পদটিও শূন্য রয়েছে।
জ্যেষ্ঠ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, প্রশাসনিক কাজে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিয়েছে। উপাচার্যের স্বাক্ষর ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য, পিএইচডি অর্জনের জন্য দেশের বাইরে যেতে পারছেন না।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ না করে অফিস চলাকালে অফিস বাদ দিয়ে বাইরে অলস সময় কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক। এতে করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টেবিলে ফাইলের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। কোথাও কোথাও দাপ্তরিক অফিসে টেবিলের ওপর ফাইল দিয়ে স্তূপ আকার ধারণ করেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাত দিনের কাজ করতে কয়েক মাস সময় অতিবাহিত করে ফেলছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের চলতি মাসের বেতন উত্তোলন নিয়েও সমস্যায় পড়েছিলেন। উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে বেতন দেওয়ার নিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। এতে করে মাসের চলতি বেতন নির্দিষ্ট সময়ের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হয়।
এদিকে, আট মাস ধরে এখন পর্যন্ত কোষাধ্যক্ষ পদটি শূন্য রয়েছে। তৎকালীন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আফজাল হোসেনকে স্বপদে বহাল রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড চালানো সম্ভব নয়—এই মর্মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৫ নভেম্বর ড. আফজাল হোসেনকে অব্যাহতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
কোষাধ্যক্ষ না থাকায় সৃষ্ট সমস্যার বিষয়ে অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক আকাম উদ্দীন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, কোষাধ্যক্ষকে অব্যাহতি দেওয়ার পর থেকে তাঁর কাজগুলো উপাচার্য নিজে করতেন। কিন্তু দেড় মাস থেকে উপাচার্য পদটিও শূন্য থাকায় আর্থিক ফাইলগুলো অনুমোদনের অভাবে পড়ে রয়েছে।
সৃষ্ট সমস্যার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এস এম আবদুল লতিফ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, উপাচার্য পদটি শূন্য থাকায় একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে একাধিক জটিলতা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে উপাচার্য না থাকায় তাঁর কাজগুলো আটকে রয়েছে। শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় কাজে দেশের বাইরে যাওয়া, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন তোলা, শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট প্রকাশ, সার্টিফিকেট উত্তোলনসহ নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ জন্য ক্যাম্পাসে অতিদ্রুত উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানাই।’
এ বিষয়ে ফলিত পুষ্টি ও খাদ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রতিবছর ও সেমিস্টারের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য গঠিত কমিটি একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে পাস করিয়ে নিতে হয় অথবা পরে উপাচার্যের কাছে অনুমোদন নিতে হয়। উপাচার্য না থাকায় পরীক্ষা কমিটি গঠন করতে না পারার কারণে পরীক্ষা নিতে পারছি না। এ ছাড়া বিভাগে নিউট্রিশন ক্লাব খোলার জন্য উপাচার্য কার্যালয়ে ফাইল অনুমোদনের জন্য দেওয়া রয়েছে। কিন্তু উপাচার্য না থাকায় তা এখন পর্যন্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় উপাচার্য কার্যালয়ে পড়ে রয়েছে।’
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী নাইম বলেন, ‘উপাচার্য আমাদের সর্বোচ্চ অভিভাবক। উপাচার্য না থাকায় আমরা অভিভাবকহীনতায় ভুগছি।
ক্যাম্পাসে যেকোনো সময় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার কে নেবে? অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে তা এড়ানোর সিদ্ধান্ত কে নেবে? ক্যাম্পাসে অতিদ্রুত উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানাই।’