নিয়ম না মেনে ছুটি কাটাচ্ছেন রাবির চিকিৎসকরা!
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে নিয়ম না মেনে দিনের পর দিন ছুটি কাটানোসহ নানা ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
এ ছাড়া চিকিৎসাকেন্দ্রে না এসে শহরে ব্যক্তিগত চেম্বারে বসা, প্রধান চিকিৎসককে না জানিয়ে অনুপস্থিত থাকারও অভিযোগ রয়েছে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে।
আজ মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের এক সেকশন কর্মকর্তা চিকিৎসা নিতে আসা বেশকিছু শিক্ষার্থীকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। শিক্ষার্থীরা পরপর দুদিন চক্ষু ডাক্তারকে না পেয়ে বেশ উত্তেজিত। ডাক্তার কেন দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকেন সেটার জবাব চান তাঁরা।
এ সময় শিক্ষার্থীদের সিরিয়াল নিয়ে ফেলার কথা জানালেও আসবেন না বলে সেকশন কর্মকর্তাকে টেলিফোনে জানিয়ে দেন ডাক্তার। পরে বুধবার সকালে ডাক্তার আসার নিশ্চয়তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন ওই সেকশন অফিসার।
চিকিৎসা নিতে আসা জহিরুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এ ডাক্তারের রোগী দেখার কথা। আমি পর পর দুই দিন এলাম কিন্তু ডাক্তার আসলেনই না। এর আগেও আমি এসেছি কিন্তু এ রকমই ফেরত যেতে হয়েছে। সবার সিরিয়াল নেওয়া হয় পরে জানিয়ে দেওয়া হয় তিনি আসবেন না।’
জহিরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘অনেক সময় শুধু বমির জন্য আসলেও ডাক্তার না দেখে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পাঠিয়ে দেন। রোগ বলার আগে তাদের ওষুধ লেখা হয়ে যায়। মনে হচ্ছে আমাদের দয়া করে ওষুধ লিখে দিচ্ছে।’
এ বিষয়ে চিকিৎসাকেন্দ্রের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কয়জনের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করবেন? সব ডাক্তারেরই ওই একই অবস্থা। তাঁরা তথ্যকেন্দ্রে ফোন দিয়ে ফোনে ফোনে ছুটি নেন। আমরা সবই বুঝি কিন্তু কিছুই বলতে পারি না।’
জানতে চাইলে চিকিৎসাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত প্রধান চিকিৎসক ডা. মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘সাধারণত কেউ যদি ছুটি নিতে চায় তাহলে তাঁকে একদিন আগে দরখাস্ত দিতে হয়। বেশি জরুরি হলে প্রধান চিকিৎসকের কাছে ফোনের মাধ্যমে ছুটি নেওয়া যায়। তবে আনোয়ার হোসেন আমার কাছ থেকে কোনো ধরনের ছুটি নেননি।’
তবে একাধিকবার চেষ্টা করেও ফোনে চক্ষু চিকিৎসক মো. আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিকিৎসাকেন্দ্রে ২৪ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও ছুটিতে আছেন দুজন আর তিনটি পদ শূন্য রয়েছে। যে ১৯ জন চিকিৎসক রয়েছেন তাদের বেশির ভাগ দিনের প্রথম শিফটে (সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত) দায়িত্ব পালন করেন। বাকি দুই শিফটে (দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা, রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত) প্রায়ই চিকিৎসককে পাওয়া যায় না।
এ ছাড়া দ্বিতীয় শিফটের দায়িত্বে থাকা ডা. এ এফ এ জাহিদ ও ডা. নূরমহল বেগমকে প্রায়ই নির্ধারিত সময়ে পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স সমিতির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে উপ-প্রধান চিকিৎসক ডা. মাসিহ উল আলম হোসেনের দেখা মেলে না। তবে নির্ধারিত সময়ে মেডিকেল সেন্টারের পরিবর্তে রাজশাহী নগরীসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিগত চেম্বারে সময় দেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
চিকিৎসাকেন্দ্রের অন্য ডাক্তারদের দায়িত্বে অবহেলা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে মাসিহ উল আলম বলেন, ‘আসলে প্রধান চিকিৎসক তবিবুর রহমান শেখ ঢাকায় থাকার কারণে আজকের জন্য আমি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমি এসব সম্পর্কে কিছুই বলতে পারব না।’