টাকা দিয়েও পরিবহনসেবা পাচ্ছেন না জবি শিক্ষার্থীরা
রাজধানীর পুরান ঢাকায় অবস্থিত দেশের একমাত্র অনাবাসিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। অনাবাসিক হওয়ার কারণে সব শিক্ষার্থীকেই ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে আসা-যাওয়া করতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা নির্ভর করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনের ওপর। আর প্রতিবছরই এ খাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করেন তাঁরা।
অথচ অর্থ দিয়েও শিক্ষার্থীদের সেবা না দেওয়ার নজির প্রতিনিয়তই যেন নিত্যসঙ্গী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সেবা খাতটির। বাস সংকট এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অতি স্বাভাবিক ঘটনা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টা অনুষদের ৩৬ বিভাগে প্রায় ২১ হাজার শিক্ষার্থী পড়ছেন। প্রতি শিক্ষাবর্ষে একজন শিক্ষার্থীকে পরিবহন ভাড়া বাবদ ৬০০ টাকা করে পরিশোধ করতে হয়। সে হিসাবে ২১ হাজার শিক্ষার্থী থেকে পরিবহনসেবা বাবদ বছরে এক কোটি ২৬ লাখ টাকা আয় করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসসংখ্যা অপ্রতুল হওয়ার কারণে টাকা দিয়েও সেবা পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা। আবাসন সংকট নিরসনের পাশাপাশি পরিবহনসেবা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলেও এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো রা নেই।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের পরিবহনে জবির মোট ১২টি দ্বিতল ও দুটি একতলার বাস রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থে কেনা এবং বাকি ১১টি ভাড়ায় চালিত। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র তিন হাজার ধারণক্ষমতার ১৪টি বাস।
এ হিসাব ধরে পরিবহন সুবিধার বাইরে রয়েছে জবির সাড়ে ১৭ হাজার শিক্ষার্থীই। সংখ্যার হিসাবে এরা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৮৫ শতাংশ।
এ ছাড়া বাসের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে ঝুঁকি নিয়েই বাসে যাতায়াত করেন শিক্ষার্থীরা। ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায়।
এ ব্যাপারে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সাইফ হাসান মনির বলেন, ‘নরসিংদী থেকে অনেকটা বাধ্য হয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে আসি। কারণ, অন্য যানবাহনে আসতে অনেক বেশি খরচ হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে আসা যেন দুর্ভোগের নামান্তর। প্রতিদিনই ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ শিক্ষার্থী এ বাসে করে ক্যাম্পাসে আসে। অনেকে ঝুঁকি নিয়ে বাসের দরজায় ঝুলে ক্যাম্পাসে আসে।’ এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র সাইফ আরো জানান, নরসিংদী থেকে সারা দিনে ক্যম্পাসে একটিই বাস আসে। ফলে অনেক সময় দুপুর ১২টায় ক্লাস থাকলেও বাসের ঘড়ির সময় ধরে সকাল ৮টায় ক্যাম্পাসে আসতে হয়। এদিকে আবার ক্যাম্পাসে আড্ডা ও পড়াশোনার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। অনেক সময় তো সেমিনার ও লাইব্রেরিতে বসার জায়গা থাকে না।
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরেই বিকল হয়ে পড়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বাস। তীব্র পরিবহন সংকটের মধ্যেও এ বাসগুলো মেরামতে কোনো উদ্যোগ নেই প্রশাসনের।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি এ এম মুজাহিদ অনিক বলেন, প্রতিবছরই পরিবহন ভাড়া বাবদ প্রত্যেক শিক্ষার্থী থেকে ৬০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। সে হিসাবে বছরে প্রায় এক কোটির বেশি টাকা আদায় করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ টাকা দিয়ে শিক্ষার্থীর পরিবহন সমস্যার নিরসনে বছরে দু-তিনটি বাস কেনা যায়। পাশাপাশি বিকল বাসগুলোও মেরামত করতে পারে। অথচ এ ক্ষেত্রে একেবারেই গুরুত্ব দিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে অনাবাসিক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য আলাদা কোনো পরিবহন নেই। এ ব্যাপারে গণিত বিভাগের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাবানা ইয়াসমিন রূপা বলেন, ‘মেয়েদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা পরিবহনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে বিভিন্ন সময় ভোগান্তি বাড়ে ছাত্রীদের।’
বাস সংকটের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন বিভাগের সহকারী নিবন্ধক আবদুল আজিজ এসব সমস্যার কথা অকপটে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, কিছু সীমাবদ্ধতা তো আছেই। তবে নতুন বাস কেনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে এবং প্রতি রুটে শিফট সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে। এটি কার্যকর হলে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ অনেকটা লাঘব হবে বলে জানান তিনি।