কমল জাবির কর্মঘণ্টা, শিক্ষার্থী-কর্মকর্তাদের ক্ষোভ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে নতুন অফিস সময়সূচি। নতুন এই সূচি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্মঘণ্টা আগের চেয়ে কমেছে। অবশ্য এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষক সমিতির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে সপ্তাহে শুক্র-শনি দুদিন ছুটি ও সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মোট সাড়ে সাত ঘণ্টা অফিস সময়সূচি নির্ধারণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে দুপুর ১টা থেকে থাকবে মধ্যাহ্নভোজ ও নামাজের জন্য আধাঘণ্টার বিরতি।
গত ২৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সাপ্তাহিক ছুটি ছিল একদিন এবং অফিস সময়সূচি ছিল সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত (সাড়ে ৬ ঘণ্টা)। মাঝখানে কোনো বিরতি ছিল না। নতুন নির্ধারণ করা সময়সূচিতে সপ্তাহে কর্মদিবস হবে পাঁচদিন এবং কর্মঘণ্টা হবে ৩৫ ঘণ্টা (মধ্যাহ্ন বিরতি বাদে)। যা আগে ছিল যথাক্রমে সপ্তাহে ছয়দিন ও ৩৯ ঘণ্টা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের সংগঠন- অফিসার সমিতি। নতুন এ সিদ্ধান্ত বাতিল করার দাবি জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার অফিসার সমিতির সদস্যরা কর্মবিরতি ও উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করেছেন।
অফিসার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বাবুল এনটিভি অনলাইনকে জানান, এই সিদ্ধান্ত বাতিল না করা হলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেবেন তাঁরা। তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্তে শুধু শিক্ষকরাই লাভবান হবেন। এতে একদিকে যেমন সপ্তাহে অফিসের কর্মঘণ্টা কমেছে অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ক্লাসের সংখ্যাও কমে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা আগের সময়সূচি অনুযায়ী সপ্তাহে ছয়দিনই অফিস করতে চান। কারণ হিসেবে এটাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে, নতুন নির্ধারণ করা সময়সূচিতে ক্লাসের সংখ্যা কমে যাবে এবং সেশনজট বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের অনেকেই ক্ষোভ জানিয়েছেন। শুক্র-শনিবারে সান্ধ্যকালীন কোর্স নির্বিঘ্ন করতেই শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপ দিয়ে এমন সিদ্ধান্ত আদায় করেছেন বলেও দাবি করেন অনেকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মো. দিদার নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় একটি সার্বক্ষণিক প্রতিষ্ঠান। প্রয়োজনভেদে এখানে শুক্রবারেও ক্লাস হতে পারে। অফিশিয়ালি দুইদিন ক্লাস বন্ধ করা বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার বিপরীত। নিশ্চিতভাবে উনারা ক্লাস বন্ধ করবেন না। ক্লাস ঠিকই চলবে। তবে শুক্র ও শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠবে প্রাইভেট পণ্যের বিশ্ববিদ্যালয়।’
ফারদীন ফেরদৌস নামের এক সাবেক শিক্ষার্থী কটাক্ষ করে লিখেছেন, ‘শিক্ষকদের চাপে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন করা হলো। বড়লোকের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট কমিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য আরো নিবিড় পরিচর্যার বিষয়টি নিশ্চিত করবার জন্য দেশের প্রথম নারী উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম স্যারকে সাধুবাদ জানাই!’
সফিউল আলম প্রধান নামের এক শিক্ষার্থী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এখানে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে। সুতরাং সপ্তাহে ছয়দিন ক্লাস করতে তাঁদের তেমন কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু নতুন নিয়মে যদি সপ্তাহে দুইদিন বন্ধ থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান ক্লাসরুম সংকটের কারণে বিভিন্ন ব্যাচের ক্লাস সংখ্যা কমবে এবং সেশন জট বাড়বে বলেও মনে করেন তিনি।
তবে নতুন সময়সূচির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার বলেন, নতুন সময়সূচিতে শিক্ষার্থীরাই লাভবান হবে। এখন সাড়ে ৭টায় অফিস শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে আসে কয়টায় এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। এরপর দুপুর ১টার মধ্যেই তারা ব্যাগ গোছাতে শুরু করে। বেশির ভাগ দিনই ১টার পর ছাত্ররা অফিস খোলা পায় না। এইটুকু সময়ের মধ্যে তারা অফিস করে। তা ছাড়া এখানে আগেও সপ্তাহে পাঁচদিন ক্লাস ছিল উল্লেখ করে এই শিক্ষক বলেন, ‘পরে আমরা শিক্ষকরাই ক্লাস বেশি হবে মনে করে সেটা ছয়দিন করেছি। কিন্তু সেটা হয়নি। আর সারা বিশ্বেই সপ্তাহে দুদিন ছুটি। একদিন বাড়ির সব কাজ করবে, একদিন রেস্ট নেবে।’