সাত বছরে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশিওক্যাম্প
বেসরকারি নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যাল সার্ভিসেস ক্লাব আয়োজিত সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রতিযোগিতা ‘সোশিওক্যাম্প’ পার করল সাত বছর।
শুরুতে বিষয়টি সম্পর্কে সবাইকে বেশ বেগ পেতে হলেও এখন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এই প্রতিযোগিতা পেয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। বর্তমানে ‘সোসিওক্যাম্প’ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রতিযোগিতা। আর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সবচেয়ে বড় ইভেন্টগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
আজ বৃহস্পতিবার সোশ্যাল সার্ভিসেস ক্লাবের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়েছে।
শুরুর গল্প :
আজ থেকে প্রায় সাত বছর আগে, ২০১০ সালে সেসময়কার সোশ্যাল সার্ভিসেস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এমন একটি প্রতিযোগিতার কথা চিন্তা করেন যার মাধ্যমে সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা যাবে। এ লক্ষ্য থেকেই সে বছর শুরু হয় সোশিওক্যাম্প প্রতিযোগিতার।
সোশিওক্যাম্প কী ধরনের প্রতিযোগিতা সেটা যেহেতু প্রথম দিকে কেউ জানতই না, তাই তখন পথচলাটা ছিল খুবই কষ্টসাধ্য। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার নিয়ম, বিচারক নির্বাচন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি পাওয়া সব মিলিয়ে আয়োজকদের সামনে ছিল অনেক বাধা।
অবশ্য সেসব বাধা কাটিয়ে ওঠার পর ধীরে ধীরে এই প্রতিযোগিতা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এর ধারাবাহিকতায় এ বছর হয়ে গেল সোশিওক্যাম্প-৭। আর এবার এটি হয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে।
সোসিওক্যাম্প-৭ :
সোশিওক্যাম্পের প্রথম ধাপ হলো রেজিস্ট্রেশন। গত ২৩ থেকে ২৭ অক্টোবর নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বুথ বসিয়ে সোসিও ক্যাম্পের রেজিস্ট্রেশন করা হয়। একই সাথে এই পাঁচদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের সকল সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে সোসিওক্যাম্পের প্রচারণা চালান সোশ্যাল সার্ভিসেস ক্লাবের সদস্যরা। এ ছাড়া অনলাইনের মাধ্যমেও রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ ছিল।
সোশিওক্যাম্প-৭ এর জন্য তৈরি করা প্রমোশনাল ভিডিতে অংশ নেন জনপ্রিয় ব্যান্ড অর্থহীনের সুমন (বেস-বাবা), ডাক্তার আবদুন নূর তুষার, অভিনেতা ইরেশ জাকের, গায়ক ও সংগীত পরিচালক জন কবির, নেমেসিস ব্যান্ডের জোহাদ রেজা চৌধুরী, স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান নাভিদ মাহবুব, করপোরেট ট্রেইনার, ওয়ান টু ওয়ান কোচ, ডন সামদানি ফ্যাসিলিটেশন অ্যান্ড কন্সালটেন্সির প্রতিষ্ঠাতা জি ডন সামদানি এবং ফোর্বসের তরুণ উদ্যোক্তার তালিকায় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বসের এশিয়ার অনূর্ধ্ব-৩০ তরুণ সামাজিক উদ্যোক্তার তালিকায় স্থান পাওয়া ওসামা বিন নূর।
এবারের সোশিওক্যাম্পে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪৭৩ টি দল অংশ নেয়। এই দলগুলোর দুজন প্রতিনিধি নিয়ে গত ২৮ অক্টোবর প্রথম রাউন্ডের ওয়ার্কশপ করা হয় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে।
এ সময় প্রতিযোগীদের একটি সামাজিক সমস্যার ‘কেস’ দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী তা সমাধান করে পাঁচদিনের মধ্যে সোসিওক্যাম্পের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে সাবমিট করতে বলা হয়। এরপর এই সমাধানগুলো পরীক্ষা করেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সেখান থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডের জন্য বাছাই করা হয় ৩০টি দলকে।
দ্বিতীয় রাউন্ডের আগে একটি এই ৩০টি দল নিয়ে ৬ নভেম্বর রাজধানীর সিক্স সিজন্স হোটেলে আরেকটি ওয়ার্কশপ করা হয়।
এরপর ১৩ নভেম্বর এই ৩০ টি দলকে নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রেজেন্টেশন দিতে বলা হয়। দ্বিতীয় রাউন্ডে বিচারক হিসেবে ছিলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক এবং বিভিন্ন কোম্পানির উচ্চ পদের কর্মকর্তারা। দ্বিতীয় রাউন্ডের ৩০টি দল থেকে সেরা পাঁচটি দলকে ফাইনাল রাউন্ডের জন্য নির্বাচিত করা হয়।
গত ২০ নভেম্বর সোসিওক্যাম্প ৭-এর ফাইনাল রাউন্ডে এই পাঁচটি দল বিচারকদের সামনে তাঁদের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর প্রেজেন্টশন দেয়। এর ওপর ভিত্তি করে সেরা তিন নির্বাচিত করেন বিচারকরা।
প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ‘টিম হোল্ড’, দ্বিতীয় হয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের দল ‘পেপার প্লেনন’ এবং তৃতীয় হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নাইন ওয়ান ওয়ান’।
প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দল পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান অধিকারী দল পেয়েছে যথাক্রমে ৭০ হাজার টাকা এবং ৪০ হাজার টাকা।
প্রতিযোগিতার শেষ দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আতিকুল ইসলাম, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ এবং সম্মানিত অতিথি ছিলেন স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর এম এমদাদুল হক।
এ ছাড়া বিচারক হিসেবে ছিলেন আবদুন নূর তুষার, ইরেশ জাকের, জারা মাহবুব, আরিফ আর হোসেন এবং সাফাত ইশতিয়াক। বিশেষ অতিথি ছিলেন রেনকন মোটরবাইক লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শাওন হাকিম ও স্টেপস সুজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম কবির।
এই কার্যক্রম সম্পর্কে ক্লাবের বর্তমান প্রেসিডেন্ট হামিদ মুজতবা সিদ্দিকী বলেন, তরুণদের মধ্যে থাকা প্রতিভা সঠিক প্ল্যাটফর্মের অভাবে বিকাশ লাভ করতে পারে না। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তরুণদের ভাবনাগুলো সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়।