রাবির নিয়োগ পরীক্ষা ফের বন্ধ করল আ. লীগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নিয়োগ পরীক্ষা আবার বন্ধ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা ও ১০টায় অনুষ্ঠেয় নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করে দেয় মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও রাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এর আগে ২১ ডিসেম্বর বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের আয়া ও মালী পদের নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করে দেয় আওয়ামী লীগ।
সকালের পরীক্ষায় বিবলিওগ্রাফার কাম রেফারেন্স সহকারী দুজন ও ক্যাটালগার পদে একজনের বিপরীতে ৭০ জন অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষা দিতে ঢুকলেও নেতাকর্মীরা তাঁদের বের করে দেয়।
১০-১১টায় অনুষ্ঠেয় ডাটা এন্ট্রি অপারেটরে ২০ পদের বিপরীতে তিন হাজার ১০০ জনের পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে ঢুকতেই পারেননি। বিকেল ৩-৪টায় গ্রন্থাগার সহকারীসহ চার পদের বিপরীতে ১৫০ জনের পরীক্ষা অংশ নেওয়ার কথা আছে। সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকগুলো দিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো ফটকও বন্ধ করে দিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। যেসব ভবনে পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে, সেসব ভবনের গেট বন্ধ করে সামনে অবস্থান নিয়েছে তারা। অনেকের প্রবেশপত্র ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগও উঠছে।
এ বিষয়ে রাবির প্রক্টর অধ্যাপক মুজিবুল হক আজাদ খান বলেন, ‘‘একদল যুবক, যারা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে এসেছে। এসে সকাল সাড়ে ৮টার পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে। তাতে বোঝা যায় যে, আওয়ামী লীগের লোকজনই বন্ধ করে দিয়েছে। তবে আমরা পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করে যাব। এ জন্য আমরা পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য চেয়েছি।’’
এ ব্যাপারে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকে সকালের পরীক্ষার্থীদের বের করে পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে। পরীক্ষার্থীদের যেমন বাধা দিচ্ছে আবার যেসব শিক্ষক পরীক্ষা নেবেন, তাঁদেরও বাধা দেওয়া হচ্ছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি যেন পরীক্ষা নেওয়া যায়।’
‘ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীই তো নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। সবাই দেখতেও পাচ্ছে তারা এসব কাজকর্ম করে যাচ্ছে, পরীক্ষা বন্ধ করে দিচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে তারা আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেনি।’
তবে পরীক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি খারাপের সংবাদ শুনে আমরা সকালে সেখানে যাই। পরিস্থিতি যেন খারাপ না হয়, সে জন্য আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। তবে কোনো পরীক্ষার্থীকে বের করে দিইনি। এখন আমরা চলে এসেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের নিয়োগ না দিয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের চাকরি দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাই আমরা এই নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। আমাদের সঙ্গে আলোচনায় আসতে হবে, নয়তো আন্দোলন চলবে।’
এদিকে এই নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করতে রাবির উপ-উপাচার্য এবং আইসিটি সেন্টারের প্রশাসককে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রাত ১১টার দিকে এ দুই শিক্ষকের বাড়িতে গিয়ে অস্ত্র হাতে মহড়া ও হুমকি দেওয়া হয় বলে জানান তাঁরা।
এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘রাজশাহী নগরীর টিকাপাড়ায় আমার বাড়িতে গিয়ে ৫০-৬০ জনের একটি দল আজকের পরীক্ষা বন্ধ করতে বলে। না করলে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা।’
আইসিটি সেন্টারের প্রশাসক খাদেমুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘মোটরসাইকেলে করে ১০-১২ আমার বাড়িতে এসে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে গেছে। তবে তাদের চিনতে পারেনি।’