শিশুর সম্ভাবনা বিকাশে 'সহজপাঠ বিদ্যালয়'
জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ শিশু। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আগামীতে জাতির উন্নতিতে সকল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে। সে জন্য দরকার শিশুর সকল সম্ভাবনা বিকাশে সুস্থ-সুন্দর পরিবেশ। আর এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভুমিকা রাখতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সে লক্ষ্য নিয়েই যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে 'সহজপাঠ বিদ্যালয়'।
শিশুশিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক আবুল মোমেনের নেতৃত্বে আসছে সহজপাঠ। আগামী বছরের জানুয়ারী মাস থেকে ঢাকার লালমাটিয়ার ‘বি’ ব্লকে ৭/১৭ নাম্বার বাড়িতে 'সহজপাঠ বিদ্যালয়' কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যালয়টির কার্যক্রম ও পরিকল্পনা শিক্ষানুরাগী মানুষের কাছে তুলে ধরতে শনিবার বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এক পরিচিতিপর্ব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন দেশ বরেণ্য শিক্ষাবিদ প্রফেসর ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক পবিত্র সরকার, বিশিষ্ট গবেষক ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, মানবাধিকার-নেত্রী সুলতানা কামাল ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ আরো অনেক বিশিষ্টজন।
আয়োজনে বক্তৃতাকালে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, সহজপাঠের উদ্যোগ আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষাদান করা। সহজপাঠের সর্বাঙ্গিক মঙ্গল কামনা করি। সহজপাঠ যেন শিশুর মধ্যে থাকা সকল সম্ভাবনা তুলে আনতে পারে যেই কামনা করছি। শিক্ষাকে আনন্দ হিসাবে নিয়ে শিশুরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হবে এই প্রত্যাশা রইল।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক পবিত্র সরকার বলেন, সহজপাঠের চলন যেন সহজ হয় সেটা এর সাথে যারা জড়িত তারা নিশ্চিত করবেন বলেই আশা রাখছি। নতুন এই উদ্যোগে নামকরনে রবীন্দ্রনাথের সাথে মিল আছে। রবীন্দ্রনাথ ১৯৩০ সালে সহজপাঠ নামক বইটি রচনা করেন। বিদ্যালয়টিতে বাংলার সাথে সাথে ইংরেজী ভাষাও থাকতে পারে, এতে সমস্যা নেই। পুঁথিগত শিক্ষার বাইরে সহজপাঠকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান।
বিশিষ্ট গবেষক ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন নেই। সহজপাঠ শিশুদের মনে বাংলার প্রতি ভালোবাসা আরও বাড়িয়ে দিতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
মানবাধিকার-নেত্রী সুলতানা কামাল বলেন, বাচ্চাদের সহজ পথে শিক্ষার দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সহজপাঠকে ধন্যবাদ। সহজপাঠের মাধ্যমে এমন সব শিক্ষার্থীদের পাব যারা আসলেই প্রকৃত শিক্ষা লাভ করবে। সহজপাঠের সবার প্রতি অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, বাবা মায়েরা আজকাল শিশুদের বই পড়তে দিতে চান না। পড়ার চাপ বাচ্চাদের সৃজনশীলতা নষ্ট করে দেয়। বহু সমস্যার মাঝেও দেশকে নিয়ে আশাবাদী কারন তরুণ প্রজন্ম দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সহজপাঠকে সফল হতেই হবে যেন একে উদাহরন হিসাবে অভিভাবকদের কাছে তুলে ধরা যায়।
বিশিষ্ট শিশুশিক্ষাবিদ আবুল মোমেন বলেন, শিশু নির্যাতনের বিচিত্র তথ্য পাই পত্রিকায়। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে শিশুরা শৈশব উপভোগ করতে পারে না। শিশুরা চাপের ভেতর থাকে। এমন প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন যেখানে মধ্যমনি হবে শিশুরা। সরকারের পাশাপাশি শিশুদের প্রতি সমাজেরও কর্তব্য রয়েছে। সহজপাঠ শুধু জ্ঞানচর্চা নয় মনুষ্যত্ব চর্চারও কেন্দ্র।
সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সহজপাঠ শিক্ষাকে মজবুত করবে। শিশুর জানার পরিধি বাড়িয়ে দিতে বিশেষ ভুমিকা রাখবে। সহজপাঠ সহজ করেই শিশুদের শিক্ষা দিক এমনটাই কাম্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান বলেন, শিক্ষার সঠিক কাজটি আমরা করতে পারছি না। অভিভাবকরা দেশপ্রেম ও মানবাধিকার চর্চা করলে তাদের সন্তানরা চাপ থেকে সহজে বেরিয়ে আসতে পারবে। আমাদের দেশে সহজপাঠের মত আরো ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রয়োজন।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, সহজপাঠ পুঁথিগত না। সফল ও সুশিক্ষিত মানুষ হিসাবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলবে। শিশুদের মানসিক বিকাশ ঘটিয়ে তাদের আগামী দিনের জন্য তৈরি করবে। সহজপাঠ এগিয়ে যাক।
বুদ্ধিজীবী সুভাষ সিংহ রায় বলেন, সহজপাঠের সাথে থাকবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সহজপাঠ যেন শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে সহজ করে এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। শিক্ষাকে যেন শিশুরা বোঝা না ভেবে আনন্দে শিখতে পারে এবং নিজেদের প্রতিভা বিকশিত করতে পারে সে জন্য বিশেষ ভুমিকা রাখতে হবে সহজপাঠকে।
এদিকে অনুষ্ঠানে সহজপাঠ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সহজপাঠ শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশের লক্ষ্যে একটি সামাজিক উদ্যোগ। আধুনিক, মানবিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও বাঙ্গালী সংস্কৃতি ধারন করেই এগিয়ে যাবে সহজপাঠ। সহজপাঠ বিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য শিশুর সামগ্রিক বিকাশ নিশ্চিত করা। শিক্ষার মূল কাজ হল শিশুর সকল সম্ভাবনা বিকাশের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন। যাতে উচ্চতর পর্যায়ের শিক্ষা শেষে প্রজ্ঞাবান, পরিণত, প্রকৃত মানুষ রূপে তাদের আত্মপ্রকাশ সম্ভব হয়। শিক্ষাকে শুধু পাঠ্যবই, মুখস্থবিদ্যা, পরীক্ষা, সনদপত্রের সংকীর্ণতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। শিক্ষা যথাযথভাবে লালিত ও বিকশিত হয় যথার্থ মানবিক, নির্ভিক, সাংস্কৃতিক পরিবেশে। যদি শিক্ষাকে আনন্দময়, সৃজনশীল ও ফলপ্রসূ করে তোলা যায় তবেই সেটা সম্ভব। সেই স্বপ্ন নিয়েই যাত্রা 'সহজপাঠ বিদ্যালয়' এর।