শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি পাঠাগারে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত
১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবসটি উপলক্ষে সকালে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পাঠাগারের সদস্যরা ফুল দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানান।
বিকেল ৩টায় পাঠাগারটির সদস্যরা নাখালপাড়া এলাকায় একটি মিছিল করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নাখালপাড়া শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ ছাড়া এ সময় অনুষ্ঠানে আসা কড়াইলের শহীদ রুমী স্মৃতি পাঠাগারের সদস্যরাও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন শহীদ ফয়জুর রহমানের সন্তান ও বাংলাদেশের প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব, শহীদ মুনীর চৌধুরীর সন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেনের সন্তান তৌহিদ রেজা নূর ও পরিবেশবিদ মোকারম হোসেন।
এ সময় আহসান হাবীব বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘যাদের বই পড়তে ভালো লাগে না, তারা যদি ২১ দিন বই পড়ার চেষ্টা করেন, তাহলে তা অভ্যাসে পরিণত হবে।’
তৌহিদ রেজা নূর ম্যাক্সিম গোর্কির ‘পৃথিবীর পাঠশালা’ বইটির উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের চারপাশের সবকিছু থেকেই অনেক কিছু শেখার আছে। বাচ্চাদের কাঁধে বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে আর গোল্ডেন এ প্লাসের পেছনে না ছুটিয়ে বাবা-মায়েদের উচিত সন্তানদের বিকশিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া। কেননা সমাজে লেখক-শিল্পী-সাহিত্যিকসহ বিভিন্ন বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকারী মানুষদেরও খুব দরকার।’
এলাকার শিশু-কিশোরদের ভালো বই ও উন্নত সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে আসিফ মুনীর তন্ময় বলেন, ‘২৮ বছর ধরে এই এলাকায় পাঠাগারটি কাজ করে যাচ্ছে, এটা একটা বড় ব্যাপার।’ এ সময় তিনি পাঠাগারটিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রচনাবলি ও তাদের নিয়ে রচিত বইপত্রের সংগ্রহ বাড়ানোর ব্যাপারে জোর দেন। তিনি ভবিষ্যতেও পাঠাগারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংযোগ রক্ষা করার আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে পাঠাগারের সভাপতি আলী মো. আবু নাঈম বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিকে সমুন্নত রাখতে আমাদের পাঠাগার ক্ষুদ্র শক্তি নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শহীদ বুদ্ধিজীবীরা এমন দেশ চেয়েছিলেন, যে দেশে মানুষে মানুষে বৈষম্য থাকবে না, মানুষের ওপর মানুষের শোষণ থাকবে না। তারা এমন দেশ চেয়েছিলেন, যে দেশে মানুষের সব গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হবে। কিন্তু সে দেশ কি আমরা পেয়েছি? তাঁদের এই স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি। আমরা সেই স্বপ্নটাকে বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্টা করছি।’
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পাঠাগারের শিশু-কিশোর সদস্যরা গান, নাচ, ছড়া ও কবিতা আবৃত্তি করে। এ ছাড়া গান পরিবেশন করে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী তেজগাঁও থানা সংসদ ও শহীদ রুমী স্মৃতি পাঠাগারের সদস্যরা।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে পাঠাগারের সদস্যদের অংশগ্রহণে বাল্যবিয়ে বিরোধী নাটক ‘প্রতিরোধ’ ও শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে তুলে ধরে নাটক ‘আমার দেশের লাগি’ মঞ্চস্থ হয়।
অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন পাঠাগারের সভাপতি আলী মো. আবু নাঈম। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দেবাশীষ বিশ্বাস, পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক খাদিজা বেগম নিপা, অর্থ সম্পাদক ফাহিমা কানিজ লাভা এবং পাঠাগারের সংগঠক বিপ্লব হোসেন ও জাহিদ হাসান নির্জন।