বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি, সা. সম্পাদক আজীবন বহিষ্কার
ফেসবুকে মন্তব্যের জের ধরে শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শুভ্র জ্যোতি টিকাদার ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ কনককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁদের একজনের নাম প্রতীক দত্ত। অন্যজনের নাম জানা যায়নি। এ ঘটনায় আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন বহিষ্কৃত নেতারা।
আজ মঙ্গলবার সকালে বুয়েটের উপাচার্য খালেদা একরামের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, শিক্ষককে মারধর এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করার জন্য তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্যের জের ধরে ১২ এপ্রিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমকে মারধরের ঘটনা ঘটে।
আবু সাঈদ কনক বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে চিঠির মাধ্যমে আমাদেরকে বহিষ্কারের কথা জানিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
‘আমরা এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করব। আর প্রশাসনকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য সাতদিনের আলটিমেটাম দেব। যদি বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা না হয়, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলনে যাব,’ হুঁশিয়ারি দেন কনক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ১২ এপ্রিল তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে ১৮ ও ১৯ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বহিষ্কারের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বহিষ্কারের বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়।
শিক্ষককে মারধরের ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত বুয়েটে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. হাসিব চৌধুরী বলেন, ‘আজ ১১টায় আমাদের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
গত ১২ এপ্রিল দুপুরে বিভাগীয় অফিসে অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বসেছিলেন। এ সময় বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি শুভ্র জ্যোতি টিকাদার ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ কনকের নেতৃত্বে ১৫-২০ নেতাকর্মী ওই শিক্ষককে কক্ষ থেকে বের করে মারধর করতে থাকেন। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাঁকে টানতে টানতে ক্যাফেটেরিয়ার ভেতরে নিয়ে যান।
খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাফেটেরিয়া থেকে অধ্যাপক জাহাঙ্গীরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ সময় বুয়েটের অন্যান্য শিক্ষক এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা জাহাঙ্গীরের পক্ষ নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে জড়ো হন। তবে এ ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছিল ছাত্রলীগ।
এ ছাড়া ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ এনে গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেন বুয়েট শিক্ষার্থী সিয়াম হোসাইন।