শিক্ষক লাঞ্ছিত, বিচার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাকিব আহমেদকে লাঞ্ছনার ঘটনায় পুলিশ সার্জেন্টের বিচারের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। অবরোধের কারণে মহাসড়কের দুই পাশে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
আজ রোববার দুপুর ১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বিকেল ৩টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করেন তাঁরা।
অবরোধ শুরুর প্রায় ৪৫ মিনিট পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ওই সার্জেন্টের বিরুদ্ধে লাঞ্ছিত শিক্ষকের মামলা না নেওয়ায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং মামলা গ্রহণ না করা পর্যন্ত অবস্থান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। পরে প্রক্টর তাঁদের নিশ্চিত করেন, ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা গ্রহণ করা হয়েছে।
তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা জোনের উপকমিশনার মো. ইকবাল হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো মামলা হয়নি।
এর আগে অবরোধ চলাকালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে গেলে এক পুলিশ কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের রোষানলে পড়েন। তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা সাভার-কালিয়াকৈর পরিবহনের একটি বাস এবং সেনাবাহিনীর একটি জিপ ভাঙচুর করেন।
বেলা পৌনে ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম। তিনি শিক্ষার্থীদের জানান, সকাল থেকে পুলিশের মহাপরিদর্শক ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সাথে তাঁর কথা হয়েছে। বিভাগীয় শাস্তি এবং তদন্তসাপেক্ষে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা। এরই মধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিনদিনের মধ্যে এই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করে একজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেছেন। আমরা বিষয়টি সহজভাবে নেইনি এবং এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
উপাচার্যের সাথে ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক খবির উদ্দিন। তিনি জানান, শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে আগামীকাল সোমবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌন মিছিল ও মানববন্ধন করবে শিক্ষক সমিতি।
দোষীদের শাস্তি দাবি জাতীয়তাবাদী ফোরামের : রাকিব আহমেদকে লাঞ্ছনার প্রতিবাদ ও শাস্তির দাবি করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম। আজ রোববার দুপুরে ফোরামের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ ও দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, নিয়মরক্ষার অজুহাতে একজন সম্মানিত শিক্ষককে এভাবে অসম্মানিত ও বিব্রত করায় তাঁরা বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ।
এ ঘটনার যথাযথ বিচার দাবি করে বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘ঘটনার মূল অভিযুক্ত ইমরান ও তাঁর সহযোগীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত এবং বিভাগীয় ও দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী শাস্তি বিধানের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতির দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই বহন করতে হবে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে এ ব্যাপারে যথাযথ ও জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি রাকিব আহমেদের প্রতি সহমর্মিতা জানায় ফোরাম।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, অধ্যাপক মো. এনামুল হক খান, অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল আহছান, অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক মো. শামছুল আলম, অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার, অধ্যাপক মো. শরিফ উদ্দিন, অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, অধ্যাপক ড. মোস্তফা নাজমুল মানছুর প্রমুখ।
গতকাল শনিবার রাত ১০টা দিকে রাজধানীর উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাকিব আহমেদকে পুলিশ সার্জেন্ট ইমরান ও অন্য পুলিশ সদস্যরা লাঞ্ছিত করেন।