মিয়ানমারের সঙ্গে বসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ
ভাসমান অভিবাসীদের নিয়ে আলোচনা করতে আজ বৃহস্পতিবার মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশ। এদিন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক অভিবাসীদের উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও বলা হয়েছে, তারা রোহিঙ্গা অভিবাসীদের আশ্রয় দেবে।
অভিবাসন-প্রত্যাশী মানুষবাহী নৌযানগুলো সমুদ্রতীর থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার কঠিন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ঘোষণা দেওয়ার পর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোও সফরে গেলেন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিফাহ আমান ও ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সরে আসার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন অ্যান্টনি ব্লিনকেন। তিনিও মিয়ানমারে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে নেপিদো পৌঁছেছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এটাও জানিয়েছে, তারা অভিবাসীকে নিজেদের দেশে আশ্রয় দিতে প্রস্তুত।
ব্লিনকেন বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য যেন মিয়ানমার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়, সে জন্য মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান জানাবেন তিনি।
গতকাল মিয়ানমার সফরের যাওয়ার পথে জাকার্তায় এক যাত্রাবিরতিতে সাংবাদিকদের ব্লিনকেন বলেন, ‘আমরা মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সরাসরি কথা বলব এবং তাদের জানাব যে, রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ন করাটা তাদের দায়িত্ব। যাতে করে সেখানকার মানুষরা অনুভব করতে পারে যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে অন্য কোনো দেশে যাওয়ার কোনো দরকারই নেই।’
তবে বৃহস্পতিবারের এই বৈঠক নিয়ে সাবেক সামরিক জান্তা শাসিত দেশটিতে উত্তেজনা রয়েই যাচ্ছে। কেননা রোহিঙ্গাদের একটি জাতিগোষ্ঠী হিসেবে মানতে এখনো অস্বীকার করছে দেশটির সরকার। তারা দাবি করছে, এরা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের পরিচালক জ টে বলেছেন, ‘যদি তারা (বিশ্ব কূটনীতিকরা) রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা করতে চান, তাহলে যেমনটি আমরা আগেও বলেছি যে, আমরা এই শর্ত মেনে নেব না।’
তবে আগামী ২৯ মে ব্যাংককে এই সমস্যা নিয়ে হতে চাওয়া আঞ্চলিক সম্মেলনে মিয়ানমার যোগ দেবে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
বেশ কয়েক বছর ধরেই মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা নাগরিকরা বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছিলেন। কিন্তু গত বছর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষের পর থেকে এই অভিবাসনের হার বাড়তে থাকে। তবে সংকটটা তখনই শুরু হয় যখন সাগরপথে অবৈধভাবে ভেসে আসা এই অভিবাসীদের আশ্রয় দিতে অস্বীকার করে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড। অবশ্য এরা শুধু রোহিঙ্গাই নয়, এদের মধ্যে কাজের সন্ধানে সীমান্ত পাড়ি দেওয়া কিছু বাংলাদেশিও রয়েছেন।
বিশ্বের সংবাদমাধ্যমগুলোতে এ-সংক্রান্ত খবর ও ছবি প্রকাশের পর থেকে নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্টরা। প্রথম দিকে ভেসে আসা নৌকাগুলোকে তীরে ভিড়তে না দিয়ে আবারো সাগরে ভাসিয়ে দিচ্ছিল মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। তবে গতকাল এই সিদ্ধান্ত বদল করে অভিবাসীদের আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব দেয় তারা।
কুয়ালালামপুরে এক যৌথ বিবৃতিতে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাঁরা অভিবাসীদের সাময়িকভাবে পুনর্বাসন করে দেশে ফেরত পাঠাবে। আগামী এক বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তত্ত্বাবধানে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।