ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে শাবিতে আন্দোলন
‘ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরেই’ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মহান ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’, যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যপন্থী হিসেবে পরিচিত।
urgentPhoto
আজ সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন ‘সি’-এর দ্বিতীয় তলার ২০৯ নম্বর কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন শিক্ষকদের একাংশ। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক কবির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফোরামের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘জায়গা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন ড. জহির বিন আলমের সঙ্গে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের একজন শিক্ষক দুর্ব্যবহার করেন। পরবর্তী সময়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকসহ ১৯ জন শিক্ষক বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য উপাচার্যের কাছে যান। এ সময় উপাচার্য পর্যাপ্ত সময় দেননি বলে অভিযোগ তুলেন তাঁরা। এরপরই ওই শিক্ষকরা সভা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামেন।’
তবে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সংগঠন ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষকবৃন্দে’র আহ্বায়ক সৈয়দ সামসুল আলম এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ চালিত হয় বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের দিয়ে।”
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক অধ্যাপক কবির হোসেন ‘খন্দকার মোশতাকের ভূমিকায়’ অবতীর্ণ হয়েছেন বলেও পাল্টা অভিযোগ করেন উপাচার্যবিরোধী এই শিক্ষক নেতা।
গত ১২ এপ্রিল থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের একাংশ ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে তাঁকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। লাগাতার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত ৩০ আগস্ট উপাচার্য ভবনের সামনে শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গেলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের ওপর হামলা চালিয়ে ব্যানার কেড়ে নেন এবং তাঁদের লাঞ্ছিত করেন। উপাচার্যের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আন্দোলনকারী শিক্ষকরা তাঁকে লাঞ্ছিত করেন। এ হামলার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষকবৃন্দের’ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত ৩ সেপ্টেম্বর ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। তারা উপাচার্যকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয়ের অবতারণা করে অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম আরো বলেন, ‘গত ৩০ আগস্ট শিক্ষকদের ওপর ছাত্রদের চড়াও হওয়ার ঘটনাকে ন্যক্কারজনক দাবি করলেও পরে তাঁরাই আবার উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের জড়ান!’
শিক্ষকদের একাংশকে আন্দোলন থেকে সরে আসা এবং আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের পুনরায় আহ্বান জানানোর পাশাপাশি উপাচার্যপন্থী এ শিক্ষক নেতা প্রশ্ন তুলেন, সমিতির বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত সভায় আন্দোলনকারীদের প্রতি আলোচনার আহ্বান জানালেও তাঁরা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আন্দোলনকারীরা নিজেদের সরকারদলীয় দাবি করছেন। তাহলে কোন শক্তি বলে তাঁরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা এবং শিক্ষক সমিতির নির্দেশ অমান্য করেন?
সংবাদ সম্মেলনের আগে দুপুরে ‘শাবিপ্রবি শিক্ষকবৃন্দ’ ব্যানারে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক কবির হোসেনের সভাপতিত্বে এবং অধ্যাপক রাশেদ তালুকদারের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম, পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগে প্রধান অধ্যাপক দিলারা রহমান প্রমুখ।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক কবির হোসেন বলেন, ‘সামান্য স্পেস (জায়গা) নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালোবাসলে আমরা ভর্তি পরীক্ষাকে বিঘ্নিত করতে পারি না। উপাচার্য ক্ষমা চাওয়ার পরও আন্দোলনরত শিক্ষকরা তা মানেননি। শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনা তাঁরা মানেন না, তাঁরা মন্ত্রণালয় মানেন না, আইন মানেন না, সরকার মানেন না, শিক্ষকদের সভার সিদ্ধান্ত মানেন না। আমরা একদিনের জন্যও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ চাই না।’
সমস্যা সমাধানের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন কবির হোসেন।