খুব শিগগিরই দিনাজপুর রাজদেবোত্তর এস্টেটের আগের কমিটির মুখোশ উন্মোচন
দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক ও দিনাজপুর রাজদেবোত্তর এস্টেটের ট্রাস্টি মো. মাহমুদুল আলম বলেছেন, খুব শিগগিরই দিনাজপুর রাজদেবোত্তর এস্টেটের আগের কমিটির সব তথ্য-উপাত্ত দিয়ে ভিডিওচিত্র প্রকাশ করা হবে। যার মাধ্যমে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হবে।
আজ রোববার দুপুরে দিনাজপুর রাজবাড়ী শ্রী শ্রী কালিয়া জিউ মন্দির প্রাঙ্গণে রাজদেবোত্তর এস্টেটের নতুন কমিটির সঙ্গে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক এ কথা বলেন।
রাজদেবোত্তর এস্টেটের ট্রাস্টি মো. মাহমুদুল আলম বলেন, শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব অমলেন্দু ভৌমিক বাবু একজন প্রবীণ মানুষ। তিনি সবার শ্রদ্ধার পাত্র। তাঁর প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, তাঁর অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে আগের কমিটির একটি অংশ নিজেদের আখের গুছিয়েছে। তাদের মুখোশ দিনাজপুরবাসীর সামনে প্রকাশ করা হবে। আমরা তাদের প্রতি ঘৃণা জানাই। কারো রক্তচক্ষুকে ভয় করা হবে না। রাজদেবোত্তর এস্টেটের বেহাত হওয়া প্রতি ইঞ্চি জমি উদ্ধারে সব রকম চেষ্টা করা হবে। এজন্য যা যা করণীয়, তা করা হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, রাজদেবোত্তর এস্টেট শুধু হিন্দুদের সম্পত্তি নয়, এটা জাতীয় সম্পদ। জাতির এ সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব সবার। আগের কমিটি সম্পত্তিগুলো অবহেলায় ফেলে রেখে দিয়েছিল, যা প্রতিনিয়ত বেদখল হয়ে যাচ্ছিল, তা সত্যিই খুব দুঃখজনক। গত ১৫ জুন দায়িত্ব হস্তান্তর হলেও এখন পর্যন্ত কোনো রকম কাগজপত্র বুঝে পায়নি নতুন কমিটি। শুধু চারটি ব্যাংকের চেক বই তারা দিয়েছে। কিন্তু কোনো ক্যাশ বই, প্রণামী আদায় বই, রশিদ-মুড়ি কোনোটাই দেয়নি। তবে তা উদ্ধার করার ব্যাপারে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। প্রয়োজনে আইনের সাহায্য নিয়ে তা উদ্ধার করা হবে।
মাহমুদুল আলম বলেন, আশ্চর্যজনক বিষয় হলো- মাত্র দুই বছরে কান্তজীউ মন্দির মেলার ইজারার ২৯ লাখ টাকা আমার হেফাজতে রয়েছে। সেগুলো আমি ব্যাংকে রেখেছি, তাদের দেইনি। ফলে সেগুলো তছরুপ হয়নি। দুই বছরেই যদি এতোগুলো টাকা হয় তাহলে বাকি ২৭ বছরে কতগুলো টাকা হবে, তার কোনো হিসাব নেই। এভাবেই দায়িত্বহীন অবস্থায় ১৯৯১ সাল থেকে চলেছে দেবোত্তর এস্টেটের কমিটি। আজ সাংবাদিকদের সঙ্গে যে মতবিনিময় সভা হচ্ছে-তা অনেক আগেই হওয়া দরকার ছিল। সম্ভবত দেবোত্তর এস্টেটের ইতিহাসে এটিই প্রথম সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা। আমি আজ কয়েকটি কথা পরিষ্কার করে বলছি, এই ট্রাস্ট স্বমহিমায় যেন সারা বিশ্বে পরিচিতি পায়, সে ব্যবস্থা আমি করব।
জেলা প্রশাসক বলেন, রাজদেবোত্তর এস্টেটের সম্পত্তি যিনি দান করেছেন, সেই মহারাজাকে কেউ চিনে না। আমি তাঁকে পরিচিত করতে রাজবাড়ী ও কান্তজীউ মন্দিরে দুটি ম্যুরাল স্থাপন করব, যা দেখে সবাই জানতে পারবে, এই লোকটির সম্পত্তি এসব। আগামী দুর্গাপূজার আগেই রাজবাড়ীর দুর্গা মণ্ডপের সামনের জলাবদ্ধতা দূর করার কাজ করব। সেইসঙ্গে এখানে পর্যাপ্ত লাইটিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করব। আর একটি ভালো ব্রোশিয়ার তৈরি করব, যা হবে আন্তর্জাতিক মানের। ওই ব্রোশিয়ারই রাজদেবোত্তরের সব সাক্ষ্য বহন করবে।
মাহমুদুল আলম বলেন, আমরা এ কাজ করতে নতুন কার্যকরী কমিটি গঠন করেছি। আবার এই কমিটির মাথার ওপর একটি উপদেষ্টা কমিটি করেছি। যাতে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীসহ অনেক উঁচুমানের লোকজনকে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে বিচারপতি, সাবেক সচিবসহ অন্যান্য বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন। যেহেতু আমরা জাতির স্বার্থ উদ্ধারে কাজ করছি, সেজন্যই তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন। খুব তাড়াতাড়ি অ্যাটর্নি জেনারেলও আমাদের উপদেষ্টা কমিটিতে যুক্ত হবেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, রাজদেবোত্তরের টাকা আমরা জনকল্যাণে ব্যয় করতে চাই। যারা অর্থাভাবে পড়ালেখা কিংবা চিকিৎসা করতে পারছে না, তাদের সাহায্য-সহযোগিতা আমরা করতে চাই।
রাজদেবোত্তর এস্টেটের নতুন কমিটি সদস্য ও বিরল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রমা কান্ত রায়ের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন কমিটির সদস্য সচিব ও এজেন্ট রণজিৎ কুমার সিংহ। কমিটির সার্বিক কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য দেন কমিটির সদস্য শ্যামল কুমার ঘোষ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজদেবোত্তর এস্টেটের সহসভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু সালেহ মো. মাহফুজুল আলম, দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাগফুরুল হাসান আব্বাসী, কমিটির সদস্য ও দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বরূপ বকসী বাচ্চু, অ্যাডভোকেট দিলীপ চন্দ্র পাল, বিমল চন্দ্র দাস, দিনাজপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার রায়, অ্যাডভোকেট সরোজ গোপাল রায়, সঞ্জয় মিত্র প্রমুখ।
উপস্থিত সাংবাদিকরা দেবোত্তর এস্টেটের পুরাতন কমিটির সব দুর্নীতির একটি শ্বেতপত্র অবিলম্বে প্রকাশের দাবি জানান। অনুষ্ঠানে দিনাজপুর রাজদেবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট ও সদস্য সচিব রণজিৎ কুমার সিংহ বলেন, ‘৩০ বছর পর আমরা দায়িত্ব পেয়েছি। অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। সব ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথমেই বেহাত হওয়া সম্পত্তি উদ্ধার করার কাজ করা হবে। এ ছাড়া হরিবাসর সংস্কার, মহারাজার ম্যুরাল স্থাপন, মন্দিরের সামনে জলাবদ্ধতা নিরসন করা হবে। মোট কথা দৃশ্যমান উন্নয়ন আমরা করতে চাই। এ ক্ষেত্রে সাংবাদিকসহ সবার ঐকান্তিক সহযোগিতা আমাদের একান্ত প্রয়োজন।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র গীতা পাঠ করেন রাজবাড়ী শ্রী শ্রী কালিয়া জিউ মন্দিরের গীতা পাঠক বিনোদ চন্দ্র সরকার। অনুষ্ঠানের শেষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আওতায় রাজবাড়ীতে একটি গাছের চারা লাগিয়ে কর্মসূচির শুভ সূচনা করেন জেলা প্রশাসক। পরবর্তী সময়ে রাজদেবোত্তর এস্টেটের পক্ষ থেকে ২০১টি গাছের চারা রোপণ করা হবে বলে জানানো হয়।