ঘোড়াঘাটের ইউএনওর ওপর হামলা, রবিউলের জবানবন্দি
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সদ্য সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তাঁর বাবা ওমর আলী শেখের ওপর হত্যাচেষ্টা মামলায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি রবিউল ইসলাম। তিনি ওয়াহিদার কার্যালয়ে মালি হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর ব্যাগ থেকে টাকা চুরির অভিযোগে গত জানুয়ারি মাসে বরখাস্ত হন রবিউল।
দুই দফায় মোট নয় দিনের রিমান্ড শেষে রবিউলকে আজ রোববার সকালে দিনাজপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৭-এর বিচারক ইসমাইল হোসেনের আদালতে তোলা হয়। রবিউল আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ইমাম জাফর জানান, রবিউল দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এর পর আদালত থেকে তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
গত ২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে একদল দুর্বৃত্ত মই বেয়ে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে তাঁকে হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে শুরু করে। এ সময় ইউএনওর চিৎকার শুনে পাশের কক্ষে থাকা তাঁর বাবা ছুটে এসে মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তরা তাঁকেও জখম করে। পরে কোয়ার্টারের অন্য বাসিন্দারা তাঁদের চিৎকার শুনে পুলিশকে খবর দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ওয়াহিদা খানমকে ঢাকায় আনা হয়। রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি। ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন।
এ ঘটনায় ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বড় ভাই শেখ আরিফ হোসেন বাদী হয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে ঘোড়াঘাট থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
এ মামলায় এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হলেও মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে জেলহাজতে আছেন আসামি নবিরুল ইসলাম, সান্টু কুমার, উপজেলা যুবলীগের সদস্য আসাদুল হক ও পলাশ।
গত ৯ সেপ্টেম্বর রবিউলকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দোষ স্বীকার করেন। গত ১২ সেপ্টেম্বর এ বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) দেবদাস ভট্টাচার্য। তিনি জানিয়েছিলেন, রবিউল দায় স্বীকার করে জানিয়েছেন, এ ঘটনায় প্রধান পরিকল্পনাকারী এবং একমাত্র হামলাকারী তিনি নিজে। পরে তাঁকে ওই দিনই আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালতের বিচারক তাঁকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ওই রিমান্ড শেষে গত বৃহস্পতিবার রবিউলকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। কিন্তু সেদিন জবানবন্দি দেননি রবিউল। পরে আদালত আরো তিনজনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওই রিমান্ড শেষে রবিউলকে আজ আদালতে হাজির করা হয়।
এর আগে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রবিউল জানিয়েছেন, এ ঘটনার তিনিই একমাত্র পরিকল্পনাকারী ও হামলাকারী। আক্রোশ থেকেই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। তাঁর দেওয়া তথ্যমতে হামলায় ব্যবহৃত হাতুড়ি, লাঠি, মই, চাবিসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাঁর পরনের প্যান্ট, হাতের ছাপসহ মোবাইলের লোকেশনের তথ্য আলামত হিসেবে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এসব আলামত বিচারকাজে সহায়ক হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে, হামলায় আহত ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এবং তাঁর স্বামী মো. মেজবাউল হোসেনকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে। গত বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তবে বিষয়টি গতকাল শনিবার গণমাধ্যমের নজরে আসে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়েছে। একই সঙ্গে রংপুরের পীরগঞ্জে ইউএনও হিসেবে কর্মরত তাঁর স্বামী মো. মেজবাউল হোসেনকে ঢাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব হিসেবে বদলি করা হয়েছে।’
ওয়াহিদা খানম ৩১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। তাঁর স্বামী মেজবাউল হোসেনও একই ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা।